কাঁদানে গ্যাসে আহত বিক্ষোভকারীর ফুটেজকে অসত্যভাবে ধর্মীয় অস্থিরতার সাথে যুক্ত করে প্রচার

আগস্ট ২০২৪ -এ  সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বেশ কিছু্ প্রতিহিংসামূলক হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে একজন হিন্দু নারীর ওপর এসিড হামলার দাবিতে ছড়ানো ফুটেজটি ধর্মীয় সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত নয়। ভিডিওটি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি কলেজ বন্ধের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাসে আহত একজন নারী শিক্ষার্থীর বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদনে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। 

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে শেয়ার করা একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, “বাংলাদেশে প্রকাশ্য দিবালোকে হিন্দু মেয়েদের বোরখা না পড়ে বেরোনোর জন্য মুখে এসিড ছুড়ে মারা হচ্ছে।"

পোস্টে যুক্ত একটি ভিডিওতে একজন নারীকে নিজের ব্যাকপ্যাক দিয়ে চেহারা ঢাকার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁর পাশে থাকা অন্য দুইজন লোককে তাঁকে সাহায্য করার জন্য চিৎকার করে পানি চাইতে দেখা যায়। 

Image
২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

একটি কঠোর আইন প্রণয়নের ফলে বাংলাদেশে নারীদের ওপর এসিড হামলা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। নতুন ওই আইনে এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে(আর্কাইভ লিংক)। 

এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০০২ সালে যখন নতুন আইন কার্যকর হয়, ওই বছর ৪৯৪টি এসিড হামলার খবর পাওয়া গিয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে এই সংখ্যাটি কমে আটে নেমে আসে।

২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে দীর্ঘ সময়ের স্বৈরাচারী নেতা শেখ হাসিনার উৎখাতের পর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো বেশ কিছু সহিংসতার শিকার হন। এমন পরিস্থিতিতে অসত্য ক্লিপটি অনলাইনে ছড়ানো হয়(আর্কাইভ লিংক)। 

কারও কারও কাছে হাসিনার একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে বিবেচিত হিন্দু এবং মুসলিম সুফি সম্প্রদায়ের মাজারগুলো তাঁর পতন পরবর্তী বিশৃঙ্খল সময়ে কট্টর ইসলামপন্থীদের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়। 

একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে অন্যত্রও শেয়ার করা হয়েছে।

তবে ফুটেজটির কিফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে, ক্লিপটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ স্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ফেসবুক পেইজে ১৩  ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়(আর্কাইভ লিংক)। 

ভিডিওতে দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার আগে একদল বিক্ষোভকারীর সামনে একটি কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার বিস্ফোরিত হতে দেখা যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “সচিবালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া”।

মূল ভিডিও প্রতিবেদনের ২ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড থেকে অসত্য পোস্টের ক্লিপটি দেখা যায়। 

Image
অসত্য পোস্টে ছড়ানো ফুটেজ (বামে) এবং ঢাকা পোস্টের প্রকাশিত ভিডিওটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

প্রথম আলো নামে অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত ফুটেজেও একই দৃশ্য দেখা যায়(আর্কাইভ লিংক)। 

ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ(আর্কাইভ লিংক)। 

ঢাকা পোস্টের ক্লিপের বাম দিকে দৃশ্যমান ব্যক্তি এবং ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশিকুজ্জামান লিমন জানান যে, ঘটনার সাথে কোনও বোরকা বা এসিড জড়িত ছিল না।

২৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে লিমন এএফপিকে বলেন, "ফুটেজটি যেভাবে শেয়ার করা হয়েছে, তা একেবারেই ঠিক নয়”।

"আমরা যখন সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিলাম, তখন পুলিশের ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসে তিনি আহত হন।"

স্থানীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারও দাবিটিকে অসত্য বলে খারিজ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।  

বাংলাদেশে ধর্মীয় অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্যের এক ঢেউ খণ্ডন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এএফপি।  

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ