ভিডিওটি মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের, বাংলাদেশের নয়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটানো আন্দোলনের বছরপূর্তির আগে ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ফায়ার স্টেশনের ভিডিও অনলাইনে ছড়ানো হয়। এসব পোস্টে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে ভিডিওটিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দুর্নীতির ফলাফল হিসেবে দাবি করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের সাগাইং শহরের ফায়ার স্টেশনটির ছবি ২০২৫ সালের মার্চে ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে পাওয়া যায়।  

২৮ মে ২০২৫ তারিখের প্রকাশিত একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “ঠিকাদার বলছে, সবাইকে দিতে গিয়েই শেষ। আজই একটি সরকারি ভবন দেখে ভাবছিলাম সত্যি হয়ে গেল”।

পোস্টের ক্যাপশনে আরও বলা হয়, “ঘুষ খাওয়ার রাস্তা সংকোচিত হচ্ছে বলে সরকারি যারা ঘুষখোর কর্মকর্তা তাদের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, আর এতে মচকাচ্ছে একটা দল”।

ভিডিওতে আংশিকভাবে ধ্বসে পড়া একটি ফায়ার স্টেশন এবং পার্কিংয়ে রাখা দমকলের ইঞ্জিনগুলিকে ভবনের নিচে চূর্ণবিচূর্ণ হতে দেখা যায়। 

Image
লাল ক্রস সংযুক্ত করে ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের বছরপূর্তির আগে ভিডিওটি একই ধরনের ফেসবুকে পোস্টে এখানে এবং এখানে ছড়ানো হয় (আর্কাইভ লিংক)

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের দমাতে হাসিনা সরকারের শুরু করা এক নৃশংস অভিযানে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে ১,৪০০ জন লোককে হত্যা করা হয়েছে(আর্কাইভ লিংক)।  

হাসিনা সরকারের জেষ্ঠ্য নেতাদের বিচার শুরু করেছে বাংলাদেশ, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার জন্য লড়াইরত বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের মূল দাবি। অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের জুনের আগে কাঙ্খিত নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে। 

ঢাকার একটি ট্রাইব্যুনাল হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে তাকে ফেরত চেয়েছে।  ক্ষমতাচ্যুতির পর হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।

তবে অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি

অসত্যভাবে ছড়ানো ক্লিপটির কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে “২০২৫ সাগাইং আর্থকুয়েক আর্কাইভ” নামের একটি চ্যানেলে ২৪ মে প্রকাশিত একটি ইউটিউব ভিডিও পাওয়া যায়(আর্কাইভ লিংক)। 

ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, “সাগাইং ফায়ার স্টেশনের ক্ষতি, সাগাইং, মিয়ানমার”।

২৮ মার্চ মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া ৭.৭ মাত্রার এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে সাগাইং শহরটি  ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় ৩,৮০০ মানুষ নিহত হয় এবং বহু ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বসে পড়ে (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্ট(বামে) এবং ইউটিউবের ভিডিওটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

অন্য একটি কিওয়ার্ড সার্চে গত মার্চ মাসে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এবং বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ফায়ার স্টেশনের একই রকম ছবি পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)।

১৫ এপ্রিল সাগাইং ফায়ার ডিস্ট্রিক্টের একটি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও একই ছবি পোস্ট করা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)। 

অসত্যভাবে প্রচারিত ক্লিপটির সাথে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তোলা সাগাইং ফায়ার স্টেশনের গুগল ম্যাপের একটি ছবির পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতাকে কেন্দ্র করে অসত্যভাবে ছড়ানো অন্যান্য অসত্য দাবি খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছে এএফপি। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ