পথনাট্য পরিবেশনের ভিডিওকে 'সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ইসলামিস্টদের হামলা' বলে অসত্যভাবে প্রচার

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে গত আগস্ট মাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের স্বৈরাচারী নেতা শেখ হাসিনার উৎখাতের পর দেশটির ধর্মীয় সম্পর্কে উত্তাপ বিরাজ করছে। তবে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ইসলামিস্টদের আক্রমনের দাবিতে যে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সেটি একটি পথনাট্যের পরিবেশনা থেকে ধারণ করা হয়েছিল। স্থানীয় পুলিশ এএফপিকে জানিয়েছেন পোস্টে বর্ণিত ঘটনা ঘটেছে বলে কোন সংবাদ তারা পায়নি।

১৯ নভেম্বর ২০২৪ ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে বলা হয়, "শিবির হিজবুতিদের হেলমেট বাহিনী!! মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার দিন শেষ!"

হিজবুত তাহরির বাংলাদেশ এবং জার্মানিসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি ইসলামী দল। অন্যদিকে শিবির বলতে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামির ছাত্র সংগঠান ইসলামী ছাত্র শিবিরকে বোঝানো হয়েছে (আর্কাইভ লিংক এখানে, এখানে এখানে)।

Image
১১ ডিসেম্বর ২৪ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

হাসিনার শাসনামলে দুই দলকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে তার উৎখাতের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিবিরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় (আর্কাইভ লিংক)।

২৫ হাজারবারের বেশি ভিউ হওয়া ভিডিওটিতে হেলমেট পরিহিত কিছু লোককে অপর একদল লোকের ওপর লাঠি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি ভাস্কর্যের সামনে আক্রমণ করতে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে বছরের পর বছর নিষ্পেষিত ইসলামিক দলগুলোসহ নানা দল ও সংগঠনকে দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎখাতের পর উৎসাহিত হয়ে রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

হাসিনার পতন পরবর্তী বিশৃঙ্খল সময়ে তার শাসন আমলের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে দেখা হিন্দুদের ওপর এক ধরনের প্রতিশোধমূলক আক্রমণ এবং কট্টোরপন্থী ইসলামিস্ট কর্তৃক মুসলিম সুফিদের মাজার আক্রমনের শিকার হয়।

গত নভেম্বরে ইসলামিস্টদের হুমকির মুখে বাংলাদেশে ধর্মীয় সহনশীলতাকে উৎসাহ প্রধানকারী আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী তাদের জনপ্রিয় সংগীত উৎসব বাতিল করে।

একই ধরনের দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে এখানে এখানে ছড়ানো হয়েছে।

এসব পোস্টের মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকে এটিকে সত্য বলেই মনে করছেন।

একজন বলেন, "স্বাধীনতার নামে কি পরিহাস!"

জামায়াত-ই-ইসলামির পূর্বেকার মিত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে ইঙ্গিত করে অন্য একজন লিখেন, "শিবিরের সাথে এই হামলায় বিএনপিও জড়িত থাকতে পারে" (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

রাজধানী ঢাকার শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর এএফপিকে জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিবির ও হিজবুত তাহরিরে আক্রমণের কোন খবর তারা পায়নি।

গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি এএফপিকে বলেন, "সামাজিক মাধ্যমে এইধরনের যে দাবি ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।"

এছাড়া অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওর কীফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি উচ্চমানের ফুটেজ পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "লাল মজলুমদের গানের আসরে যা ঘটল।"

নিচে অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিও (বামে) এবং ইউটিউবের ভিডিওটির(ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিও (বামে) এবং ইউটিউবের ভিডিওটির(ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

আরো কীওয়ার্ড সার্চে স্থানীয় গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪.কম এবং দি ডেইলি স্টারে ভিডিওটির স্ক্রিনশটসহ প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট বিপ্লব উদযাপন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় "লাল মজলুম" নামে একটি ভ্রাম্যমান পথনাট্য পরিবেশন করা হয়েছে।

৩ ডিসেম্বর নাটকটির নির্দশক শাহমান মৈশান এএফপিকে বলেন, "শিল্পীদের উপর দুষ্কৃতিকারীদের হামলার দৃশ্যটি একটি মঞ্চ পরিবেশনা। এই দৃশ্যটি দিয়ে তাদেরকেই বোঝানো হয়েছে যারা শান্তি, সহাবস্থান এবং ভিন্ন মত ও কণ্ঠের অর্ন্তভূক্তিতে বিশ্বাস করে না।"

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ