গোপালগঞ্জের সংহিসতার সাথে পুরনো দৃশ্যকে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করে প্রচার

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী-সমর্থকদের সাথে জুলাই ২০২৫ এ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘাতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তবে ওই সহিংসা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়ানো ছবি ও ভিডিওগুলো পুরনো। ছবিগুলো সর্বশেষ সংঘাতের অন্তত কয়েক বছর আগের। আর অনলাইনে ছড়ানো জুন মাসের ভিডিওটি গরু চুরির চেষ্টায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ঘটনার।

১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, “গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে, পুলিশের পোশাক পরে সাধারণ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে । নারী ও শিশু সহ গুলিবিদ্ধ ১৩ জন। পুলিশের পোশাকের আড়ালে ( জঙ্গি দেশদ্রোহী রাজাকার)! এনসিপির নির্দেশে গুলি চালিয়েছে।”

পোস্টে যুক্ত একটি ছবিতে একটি সড়কে অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়। 

শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জে তার আওয়ামী লীগ দলের কর্মী -সমর্থকরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা করলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ছবিটি অনলাইনে শেয়ার করা হয়। গত বছর শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেকে নিয়ে এনসিপি গঠিত হয় (আর্কাইভ লিংক)।

সহিংসতার সময় নিরাপত্তা বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে, এতে পাঁচজন লোক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার কর্মীরা। 

১৭ জুলাই ভিন্ন একটি ফেসবুক পোস্টে  একটি ফটো কোলাজে কিছু লোককে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে অস্ত্রধারী লোকজনকে গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে ইঙ্গিত করা হয়। 

Image
লাল ক্রস চিহ্ন জুড়ে দিয়ে ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

একই দিন “গোপালগঞ্জ” শিরোনামে ইউটিউবে ছড়ানো অন্য একটি ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদেরকে একজন ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলতে দেখা যায়।   

“গুলিতে” নিহত এক বিক্ষোভকারীকে পুলিশ সরিয়ে নিচ্ছে দাবি করে ক্লিপটি শেয়ার করেছিলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ। যদিও পরে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়েছে(আর্কাইভ লিংক)।

Image
লাল ক্রস চিহ্ন জুড়ে দিয়ে ২২ জুলাই ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে ছড়ানো অন্যান্য পোস্টেও দৃশ্যগুলোকে গোপালগঞ্জের সহিংসতার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। 

কিন্তু রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে ছবি এবং ভিডিওগুলো পুরাতন এবং সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সাথে সম্পর্কিত নয়। 

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র এক কর্মীকে এক পুলিশ সদস্যের গুলি করার বিষয়ে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে স্থানীয় অনলাইন প্রতিষ্ঠান নিউজ বাংলার একটি প্রতিবেদনে অস্ত্রধারী পুলিশদের ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, “গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গোয়েন্দা বাহিনীর উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান কনক অন্য পুলিশ সদস্যের রাইফেল তুলে নিয়ে গুলি করেন”। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, কনককে গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। 

Image
অসত্য পোস্ট (বামে) এবং নিউজ বাংলার ছবির মধ্যে (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

১৬ জুলাই ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকারপন্থী সংগঠনের অস্ত্র ব্যবহার বিষয়ে জাগো নিউজ এর একটি প্রতিবেদনে কোলাজে ছড়ানো আগ্নেয়াস্ত্রধারী এক ব্যক্তির ছবি প্রকাশিত হয়েছে (আর্কাইভ লিংক).

সেসব বিক্ষোভ ওই বছর অবশেষে ব্যাপক সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানে রূপ নেয় (আর্কাইভ লিংক).

Image
অনলাইনে ছড়ানো কোলাজের(বামে) এবং জাগো নিউজের ছবির মধ্যে তুলনামূলক স্ক্রিনশট

একই বিক্ষোভ নিয়ে ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে দি ডেইলি স্টার প্রকাশিত ছবির সাথে কোলাজে ব্যবহৃত অন্য তিনটি  ছবির ব্যক্তিদের মিল দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

Image
একই ধরনের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে অনলাইনে ছড়ানো কোলাজের (বামে) এবং দি ডেইলি স্টোরের ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

একজন লোককে একটি পুলিশ ভ্যানে বোঝাই করার ভিডিওটির একটি স্পষ্ট সংস্করণ ৪ জুন ২০২৫ তারিখের একটি ফেসবুক পোস্টে এএফপি খুঁজে পেয়েছে (আর্কাইভ লিংক)। 

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “ভাদুঘর বাস স্ট্যান্ড গরুর বাজারে এক ছিনতাইকারীকে  ধরে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।” 

Image
অসত্য পোস্ট (বামে) এবং ৪ জুন ২০২৫ তারিখের ফেসবুক পোস্টের(ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

ভাদুঘর বাসস্ট্যান্ডটি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলায় অবস্থিত, গোপালগঞ্জ থেকে  যার দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার।

২৪ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসাইন এএফপিকে জানান যে, ভিডিওটি ভাদুঘর বাসস্ট্যান্ডের গরুর বাজারে ধারণ করা হয়েছিল। 

তিনি বলেন, “গরু চুরির চেষ্টার সময় জনগণ তাকে হাতে নাতে ধরে। লোকজন তাকে গণধোলাই দিয়ে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আমরা তাকে আদালাতে পেশ করেছি।” 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ