এআই দিয়ে বানানো ভিডিওকে 'পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ভূপাতিত বিমান' হিসেবে অসত্যভাবে প্রচার 

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর ৭ মে পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। ভারত-শাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর এক প্রাণঘাতী হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া যুদ্ধে মার্কিন মধ্যস্থতায় বিরতি ঘটে। তবে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ভারতের ভূপাতিত যুদ্ধবিমানের দাবিতে অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটি কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা তথা এআই দিয়ে তৈরি। 

৭ মে ২০২৫ তারিখে একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, "পাকিস্তানের আকাশ সীমায় পৌঁছালে লেজার অস্ত্র দিয়ে ফ্রান্সের তৈরি এসব অত্যাধুনিক ভারতের যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করে ধ্বংস করছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী"। 

পোস্টের সাথে যুক্ত নয় সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে একটি হেলিকপ্টারকে স্পষ্টতই একটি ক্ষতিগ্রস্ত যুদ্ধ বিমানকে উদ্ধার করতে দেখা যায়। 

ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ডে একজন নারীকে বলতে শোনা যায় যে, "প্রথমে উড়তে শিখো এবং তারপর যুদ্ধ করতে এসো। অকেজো পাইলটরা ভারতকে নতুন পরাজয়ের মুখে ঠেলে দিল"। 

Image
৮ মে ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী চার দিন ধরে একে অন্যের সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং কামান হামলা চালিয়েছে। ১৯৯৯ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শেষ মুখোমুখি সংঘাতের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ এই সহিংসতায় অন্তত ৬০ জন লোক নিহত হয়েছেন। 

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ১০ মে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। যা সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে ফিরিয়ে আনে(আর্কাইভ লিংক)।  

ভারত-শাসিত বিতর্কিত কাশ্মীরের একটি পর্যটন এলাকায় ২২ এপ্রিলের প্রাণঘাতী হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দোষারোপ করছে নয়াদিল্লি। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তবে ভারতের তোলা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। 

পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে তাঁরা ৭ মে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত দাবিটি স্বীকার করেনি(আর্কাইভ লিংক)। 

ভূপাতিত বিমানের কথিত ভিডিওটি একই দাবিতে অন্যত্র ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে। এছাড়া, ভারতে হামলা করতে গিয়ে গাছের সাথে আটকে পড়া পাকিস্তানের বিমানের বিপরীত দাবিতেও ভিডিওটিকে ছড়ানো হয়েছে। 

প্রকৃতপক্ষে, ক্লিপটি প্রথমে মরক্কো ভিত্তিক নিয়মিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি নানা দৃশ্য প্রকাশকারী একটি পেইজে ছড়ানো হয়।  

ভিডিওটির কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে 'এআই ইন লাইফ' নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি উচ্চ মানের ক্লিপ পাওয়া যায়। ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলার কয়েকদিন আগে ৩ মে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছিল(আর্কাইভ লিংক)। 

পোস্টটিতে "ওয়াইল্ডলাইফ", "নেচার" এবং "আর্ট"সহ বেশ কয়েকটি হ্যাশট্যাগ যুক্ত করে ক্যাপশনে বলা হয়, "ওয়ান্ডারফুল"। ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ডে শুধু বিমানের ইঞ্জিনের শব্দ রয়েছে। 

Image
অসত্য পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং ইনস্টাগ্রাম ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

ফুটেজটিতে বেশ কিছু দৃশ্যগত অসঙ্গতি রয়েছে, যেগুলো ইঙ্গিত করে যে এটি এআই দিয়ে তৈরি। এসব অসঙ্গতির মধ্যে --হেলিকপ্টারের পেছনের দিকে রোটর ব্লেডগুলোকে ভঙ্গুর এবং বিমানটিকে উঠানোর সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি গাছকে ঝাপশা দেখা যায়। 

জেনারেটিভ এআই-তে অসাধারণ অগ্রগতি সত্ত্বেও, এখনও এআই-জেনারেটেড কন্টেন্টে ত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে। এই ত্রুটিগুলি একটি ভুয়া চিত্র সনাক্ত করার সর্বোত্তম উপায়।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ঘিরে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা নানা দৃশ্য খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছে এএফপি।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ