এএফপি সম্পর্কে

এএফপি ফ্যাক্ট চেক হলো বহুভাষা এবং বহু সংস্কৃতি ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপির একটি অভ্যন্তরীণ বিভাগ, যার লক্ষ্য হলো পৃথিবীর যেখানে যখন যা ঘটুক তার সঠিক, ভারসাম্যপূর্ণ ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ করা। যে আইনের দ্বারা এএফপি প্রতিষ্ঠিত সেটির শক্তিবলে এএফপি রাজনৈতিক, বানিজ্যিক বা আদর্শিক প্রভাব হতে মুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কথা বলে। এএফপির চার্টার এবং সম্পাদকীয় নীমিতালায় এসব প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন রয়েছে যার বিস্তারিত বিবরণ এখানে রয়েছে

ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা

ফরাসি আইনে এএফপির একটি অদ্বিতীয় মর্যাদা রয়েছে, যা এমন বাধ্যবাদকতা আরোপ করে যে, সংস্থাটি কখনো তার সরবরাহকৃত তথ্যের সঠিকতা এবং নিরেপেক্ষতার ক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারবে না অথবা কোন ধরনের রাজনৈতিক, আদর্শিক বা অর্থনৈতিক পক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন হতে পারবে না। এএফপির প্রতিষ্ঠা আইনে বিস্তারিত বলা আছে যে, 'উচ্চতর পরিষদ' নামক একটি পর্যবেক্ষক কর্তৃপক্ষ রয়েছে যা সংস্থাটি জারি থাকা এবং এসব মৌলিক বাধ্যবাদকতা মেনে চলার বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

এএফপির একটি পরিচালক বোর্ড রয়েছে যা সংস্থাটির প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং এটি তার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাচন করে থাকে। বর্তমান বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন ফেব্রিস ফ্রেইস এর পাশাপাশি পাঁচজন ফরাসি সাংবাদিক প্রতিনিধি, ফরাসি সরকারের সংস্কৃতি, বিদেশ এবং অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলো থেকে তিনজন প্রতিনিধি, ফরাসি রেডিও-ভিজ্যুয়াল সেক্টর থেকে দুইজন প্রতিনিধি, এএফপিতে কর্মরতদের মধ্য থেকে তিনজন নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সংস্থার 'উচ্চতর পরিষদ' কর্তৃক বাছাইকৃত পাঁচজন বাইরে বিশেষজ্ঞ এই বোর্ডে রয়েছেন। এএফপির বার্ষিক আয়-ব্যয়ের পূর্বাভাষ 'আর্থিক কমিশন' দেখভাল, যাচাইবাছাই করে থাকে।

পরিচালক বোর্ড, উচ্চতর পরিষদ এবং আর্থিক কমিশনের সদস্যের তালিকা এখানে দেখা যাবে।

এএফপির নির্বাহী কমিটি সংস্থাটির দৈনন্দিন কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা করে থাকে এবং চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে ফেব্রিস ফ্রেইস), বৈশ্বিক সংবাদ পরিচালক (বর্তমানে ফিল চেটউইন্ড) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (বর্তমানে ফিলিপ ওনিলন) এটির নের্তৃত্ব দেন। নির্বাহী কমিটির পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক তালিক এখানে পাওয়া যাবে।

সম্পাদনা নের্তৃত্ব

এএফপির সম্পাদনা কভারেজের নের্তৃত্ব দেন এটির বৈশ্বিক সংবাদ পরিচালক ফিল চেটউইন্ড, বৈশ্বিক প্রধান সম্পাদক মেহেদী লেবুয়াচেরা এবং উপ-বৈশ্বিক প্রধান সম্পাদক জেনি ম্যাথিউ।

এএফপিতে ফ্যাক্ট চেকিং এর দেখভাল করেন সংস্থাটির প্যারিসস্থ সদরদপ্তরের ডিজিটাল ইনভেস্টিগেশনের প্রধান সম্পাদকরা। তাদের সাথে সমন্বয় করে বৈরুত, হংকং, জোহান্সবার্গ, মন্টিভিডিও এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানরত আঞ্চলিক সম্পাদকরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন:

বৈশ্বিক ডিজিটাল ইনভেস্টিগেশন প্রধান সম্পাদক: জুলি চার্পেন্ট্রাট

উপপ্রধান সম্পাদকবৃন্দ: নিনা ল্যাম্পারস্কি এবং সেড্রিক সাইমন।

আঞ্চলিক প্রধানবৃন্দ: ড্যানিয়েল ফাঙ্কে (এশিয়া প্যাসিফিক), অ্যানেলা রেটা (লাতিন আমেরিকা এবং স্পেন), ব্রেট হর্নার (আফ্রিকা), জুলিয়েট মন্টেস (ইউরোপ), খালেদ সুবেইহ (মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা) এবং মারিশা গোল্ডহ্যামার (যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা)

সম্পাদকদের এবং পুরো এএফপি ফ্যাক্ট চেক টিম সম্পর্কে আরও জানুন এখানে

পার্টনারশিপ ও অর্থায়ন

এএফপি বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে আয় করে থাকে যেমন: মিডিয়া গ্রাহক, বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম এবং ফরাসি সরকার। ২০২৩ সালে এএফপির প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী সংস্থাটির মোট আয় ছিল ৩২০ দশমিক ১ মিলিয়ন ইউরো। বিস্তারিত জানুন এখানে।

নীচে এএফপির অর্থের প্রধান সূত্রগুলোর আলাদা আলাদাভাবে তুলে ধরা হলো। সব চুক্তির শর্তাবলী পূর্ণ করার পাশাপাশি এএফপি তার সম্পাদকীয় স্বাধীনতা কঠোরভাবে অনুশীলন করে থাকে।

ফরাসি রাষ্ট্রের অর্থায়ন

ফরাসি রাষ্ট্রের সাথে এএফপির একটি আর্থিক চুক্তি রয়েছে যেটি দুইভাগে বিভক্ত। চুক্তির একাংশ হচ্ছে বানিজ্যিক যার বিনিময়ে এএফপি তার পরিচালিত সেবাগুলো ফরাসি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলোকে দিয়ে থাকে। অন্য অংশে সংস্থাটি জনস্বার্থ রক্ষার মিশন পরিচালনার জন্য খরচ হিসেবে অর্থ পেয়ে থাকে। এ বিষয়টি ১৯৫৭ সালের আইনে বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে যেই আইন রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে এএফপির স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

মিডিয়া গ্রাহক

বিশ্বজুড়ে হাজারো মিডিয়া গ্রাহকের কাছ থেকে এএফপি আয় করে থাকে যারা সংস্থাটির বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন, মাল্টিমিডিয়া, ছবি, ভিডিও এবং গ্রাফিক্স সাবস্ক্রাইব করে থাকেন।

ইউরোপে এএফপির গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে বিবিসি, ব্রান্ট, ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স টেলিভিশন, ফাঙ্ক মেডিয়েনগ্রুপে, লা মন্ডে, রাই, টামিডিয়া, দ্য টাইমস, ইউনিদাদ এডিটরিয়াল ইত্যাদি মিডিয়া সংগঠন। আমেরিকায় এএফপির ওয়্যার সার্ভিসের গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে কারাকোল টিভি, ইনফোব্যা, এল কমার্সিও, দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস, রেডিও কানাডা সহ অন্যরা। মধ্যপ্রাচ্যে আল জাজিরা, আল আরাবিয়া, আল নাহার, স্কাই নিউজ আরাবিয়া ইত্যাদি মিডিয়া। রেডিও ডিফিউশন টেলিভিশিন আইভোরিন, ন্যাশন মিডিয়া গ্রুপ এবং অ্যারাইজ নিউজ হলো আফ্রিকায় এএফপির গ্রাহকদের মধ্যে কয়েকটি। এশিয়া প্যাসিফিকে গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, এসপিএইচ মিডিয়া, মিডিয়াকর্প, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনএইচকে এবং নিউজ কর্প এর মতো সংস্থা।

গুগল

২০২১ সালের শেষ দিকে এএফপি গুগল এর সাথে নেইবারিং রাইটস এর ওপর পাঁচ বছরের চুক্তি করেছে; এর অধীনে ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল সংবাদ সংস্থাটির কন্টেন্ট ব্যবহারের জন্য অর্থ প্রদান করবে। এএফপি গুগলের সাথে পাঁচ বছর মেয়াদি আরও দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর একটি হচ্ছে স্মার্টফোনের উপযোগী 'মোবাইল স্টোরি' প্রস্তুতের জন্য অর্ধ প্রদান এবং অন্যটি হলো বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদেরকে ডিজিটাল ইনভেস্টিগেশনের টেকনিক শেখানোর জন্য অর্থ প্রদান।

পরের চুক্তির অংশ হিসেবে এএফপি সাংবাদিকদের জন্য ডিজিটাল ইনভেস্টিগেশনের ওপর একটি কোর্স তৈরি করেছে এবং অনলাইন অনুসন্ধানের নানান পরামর্শ সম্বলিত ছোট ছোট ভিডিও টিউরিয়াল আপলোড করছে। গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ এর সাথে এই কাজের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ফরাসি নির্বাচনের সময় এএফপি বিভিন্ন মিডিয়ার সাথে মিলে মিসইনফরমেশনের বিরুদ্ধে লড়তে ফ্যাক্ট-চেক প্রকাশ করেছে।

আইএফসিএন-এর গ্লোবাল ফ্যাক্ট চেক ফান্ডের মাধ্যমে এএফপি-এর মিডিয়াল্যাবকে ইএনজিএজিই তহবিলও প্রদান করা হয়েছে এবং অন্যান্য বৈশ্বিক অংশীদারদের সাথে ওয়েব পেজের সমাধান সংরক্ষণে কাজ করার জন্য ২০২৩ সালে গুগল ও ইউটিউব কর্তৃক অর্থায়ন করা হয়েছিল।

মেটা

মেটার থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং প্রোগ্রামের সাথে এএফপির একটি বানিজ্যিক চুক্তি রয়েছে। এটির অধীনে মেটা এএফপির ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন তার সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্মগুলোতে ব্যবহারের জন্য অর্থ প্রদান করে থাকে। পার্টনার হিসেবে এএফপির ফ্যাক্ট চেকিং টিম ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে সম্ভাব্য অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট চিহ্নিত করে থাকে। ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র (স্পেনিশ ভাষায়), ফ্রান্স, জার্মানি এবং ভারতে অনলাইন ডিসইনফরমেশনের বিরুদ্ধে লড়তে এএফপি মেটার মালিকানাধীন হোয়াটঅ্যাপ এর টিপলাইনেও কাজ করে।

টিকটক

আরও এক ডজনেরও বেশি ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার সাথে এএফপিও এশিয়া, ওশেনিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং স্পেনিশভাষী লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশে অভ্যন্তরীণ মডারেশনের জন্য যেসব ভিডিওতে অসত্য তথ্য থাকে সেগুলো যাচাই করার জন্য টিকটিকের কাছ থেকে অর্থ পায়।

ইউরোপীয় প্রকল্প

অনলাইনে কুতথ্য মোকাবেলায় ইউরোপীয় কমিশন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে এএফপি অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে: ভেড়া.এআই এবং ইডিএমও নেটওয়ার্ক, ডি ফ্যাক্টো, সিইডিএমও, ইডিএমও বেলুক্স, লাকমুসজ-এইচডিএমও, জিএডিএমও, বিআরওডি, এডিএমও এবং মেডমো

EDMO map

আরো তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন।

একটি ইউরোপীয় প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে এএফপি যৌথ ভাবে ইএফসিএসএন প্রতিষ্ঠা করেছে। ইউরোপীয় ফ্যাক্ট-চেকিং স্ট্যান্ডার্ডস নেটওয়ার্ক (ইএফসিএসএন) এখন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলির একটি স্বাধীন সংস্থা যা স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলির জন্য ইউরোপীয় কোড অব স্ট্যান্ডার্ডে বর্ণিত স্বাধীনতার মানদণ্ড, স্বচ্ছতা এবং সাংবাদিকতার মানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ফ্যাক্টস্টোরি

ফ্যাক্টস্টোরি এএফপির একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান যা বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষায়িত কন্টেট তৈরি করে। এটি তার মূল কোম্পানি এএফপির থেকে আলাদাভাবে পরিচালিত হয় এবং এটির তৈরি কন্টেন্ট ফ্যাক্টস্টোরি ব্রান্ডের বলে গণ্য হয়।

আইনগত তথ্য

এজেন্স ফ্রান্স প্রেস হচ্ছে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান যা বানিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এটি প্যারিস ট্রেড এন্ড কোম্পানি রেজিস্টারের অধীনে নিবন্ধিত যার নিবন্ধন নং ৭৭৫৬৫৮৩৫৪।