বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ফুটেজকে হিন্দু হত্যার অসত্য দাবিতে প্রচার

আগস্টে শিক্ষার্থীদের-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবে স্বৈরাচারী নেত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে ধর্মীয় উত্তেজনা বেড়েছে, কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়ানো সহিংস সংঘর্ষের ফুটেজটি  মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হিন্দু ছাত্রদের হত্যার নয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিওটি রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের। পুলিশের একজন মুখপাত্র এবং যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতা শুরু হয়েছিল সেটির অধ্যক্ষ এএফপিকে জানিয়েছেন যে ঘটনাটির সাথে ধর্মের সাথে সম্পর্ক ছিল না।

গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ সামাজিক মাধ্যম এক্স-র একটি পোস্টে ছড়ানো ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ, ঢাকা, বাংলাদেশ। হিন্দু স্টুডেন্টদের বাছাই করে মেরে ফেলা হচ্ছে।"

ফুটেজটিতে "ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা" লিখা একটি ভবনের কাছে লাঠি দিয়ে লোকজনের উপর আক্রমণ করছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ভবনটি ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (আর্কাইভ লিংক)।

Image
গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ভিডিওটি একই ধরণের এক্স পোস্টে ছড়ানো হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশে একজন হিন্দু ছাত্রকে হত্যা করার ভিডিও বলে দাবি করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি তাদের অনুভূত সমর্থনের কারণে তার ক্ষমতাচ্যুতির পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় প্রতিশোধমূলক আক্রমণের শিকার হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রায় আট শতাংশ হিন্দু।

হাসপাতালে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গুগলে ভিডিওটির রিভার্স ইমেজ সার্চে ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশি সংবাদপত্র দৈনিক যুগান্তরের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা একটি দীর্ঘ সংস্করণ পাওয়া যায়।

ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, "মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সঙ্গে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ"।

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা ক্লিপটি দৈনিক যুগান্তরের ইউটিউব ভিডিওটির ১৭ মিনিট ১০ সেকেন্ডে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

Image
অসত্য পোস্টে ছড়ানো পোস্টের (বামে) ও দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশিত ভিডিওটির (ডানে) স্ক্রিনশট

২৫ নভেম্বর বাংলাদেশের কালবেলা সংবাদপত্র সংঘর্ষের ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচার করে, এতে কালবেলার রিপোর্টার ঘটনাটি ব্যাখ্যা করে বলেন মোল্লা কলেজের ছাত্ররা ঢাকার কবি নজরুল এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে আসা ছাত্রদের পিটাচ্ছে (আর্কাইভ লিংক)।

বাংলাদেশের ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো সংবাদপত্র জানিয়েছে, অবহেলার কারণে হাসপাতালে মোল্লা কলেজের এক ছাত্রের মৃত্যুর পর বিক্ষোভ থেকে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার সর্বশেষ ঘটনা এটি (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

নিচে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়ানো ফুটেজ (বামে) এবং কালবেলার ভিডিওটির (ডানে) মধ্যে সাদৃশ্যগুলো এএফপি কর্তৃক হাইলাইট করে তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়ানো ফুটেজ (বামে) এবং কালবেলার ভিডিওটির (ডানে) মধ্যে সাদৃশ্যগুলো এএফপি কর্তৃক হাইলাইট করে তুলনামূলক স্ক্রিনশট

২৫ নভেম্বরের সংঘর্ষে প্রায় ১০০ জন আহত হন। তবে ডেইলি স্টারের মতে, দুজন নিহত বিষয়ে আনলাইনে ছড়ানো গুজবকে অস্বীকার করেছে পুলিশ।

মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ওবায়দুল্লাহ নয়ন ২৩ জানুয়ারি এএফপিকে বলেন, "দুটি কলেজের ছাত্র আমাদের ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে আমার কলেজের ২৫ জন ছাত্র আহত হয়েছে।"

"আহতদের মধ্যে কোনও হিন্দু ছাত্র ছিল না এবং এটি হিন্দু ছাত্রদের লক্ষ্য করে করা কোনও আক্রমণ ছিল না।"

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক আহমেদও বলেছেন যে এই সংঘর্ষে "সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাথে কোনও সম্পর্ক নেই"।

হাসপাতালের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে মোল্লা কলেজের ছাত্রের মৃত্যুর সাথে বাংলাদেশে ধর্মীয় উত্তেজনার কোনও সম্পর্ক নেই।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ মো. রেজাউল হক ২রা ফেব্রুয়ারি এএফপিকে বলেন, "ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাত্রের মৃত্যুর তদন্ত করেছে এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সাথে কোনও যোগসূত্র খুঁজে পায়নি,"।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ