বাংলাদেশে সহিংসতার পুরনো ক্লিপকে অসত্যভাবে সাম্প্রতিক ভিডিও হিসেবে প্রচার  

বাংলাদেশে অব্যাহত রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নিবিড় পর্যবেক্ষণে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ককটেল বিস্ফোরণের একটি ভিত্তিহীন গুজব অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে। তবে এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে অফিসিয়াল কোন প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়ানো ফুটেজটি ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের। ওই আন্দোলন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছিল। 

গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য এবং শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের ছড়ানো ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মলনে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ। এখন চারিদিকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।" 

পোস্টের সাথে যুক্ত ২৭,০০০ বারের বেশি ভিউ হওয়া একটি ভিডিওতে একটি জায়গায় ভারী ধোঁয়া দেখা যায়, যেখানে বেশ কয়েকজন মিডিয়া কর্মী জড়ো হয়েছিল। 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে পোস্টের ক্যাপশনে আরও বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে ভোট বানচাল করতেই পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা করা হয়েছে। সুদখুর ইউনূছ একটি ডাকসু নির্বাচন দিতে পারছে না আর জাতীয় নির্বাচন কি করে আশা করেন।” 

Image
লাল ক্রস চিহ্নসহ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

দীর্ঘ ছয় বছরের বিরতির পর ৯ সেপ্টেম্বর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল, তখন একই ধরনের পোস্ট ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স-এ ছড়ানো হয়। 

ছাত্র রাজনীতি দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মান করছে এবং ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অনেক প্রার্থী হাসিনার পতন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন (আর্কাইভ লিংক এখানেএখানে)। 

ছাত্রসংসদ নির্বাচনটি ২০২৬ সালের ফ্রেবুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান(আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)। 

তবে ডাকসু নির্বাচনের প্রাক্কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকায় এএফপির সাংবাদিকরা।

কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে স্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নিউজনেক্সট বাংলাদেশের একটি ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি পাওয়া যায়(আর্কাইভ লিংক)। 

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “টিএসসিতে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, সাংবাদিক আহত---জুলাই ১৭, ২০২৪।”

Image
অসত্য পোস্ট(বামে) এবং নিউজনেক্সট বাংলাদেশের ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট

ভিডিওটি পুরনো বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন নিউজনেক্সটের সম্পাদক নজরুল ইসলাম। গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, “এটা আমাদের ভিডিও এবং এটা গত বছরের জুলাই মাসের। আমাদের একজন সাংবাদিক ভিডিওটি ধারণ করেছে।” 

ওই সময় স্থানীয় গণমাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউনও ছবিসহ সংঘাতটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে(আর্কাইভ লিংক)। 

এএফপি এর আগেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘিরে ছড়ানো অন্যান্য অপতথ্য খণ্ডন করেছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ