সাজানো ভিডিওকে চাঁদাবাজির বাস্তব দৃশ্য হিসেবে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

২০২৬ সালের প্রথম দিকে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে নির্বাচনের আগে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে একটি ভিডিও ছড়িয়ে সেটিকে একজন ফল বিক্রেতার সাথে একজন জামায়াত নেতার ক্ষমতা প্রদর্শনের দৃশ্য বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে। তবে ক্লিপটি “সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির” জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে এএফপিকে জানিয়েছেন ভিডিওটির নির্মাতা। 

৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ফেসবুকে ছড়ানো একটি পোস্টে বলা হয়, “জামায়াত নেতার ক্ষমতা প্রদর্শন। অসহায় বড়ই বিক্রেতার সাথে বাক-বিতন্ডা। ক্ষমতায় যাবার আগেই এই ঘটনা?”

পোস্টের সাথে যুক্ত একটি ভিডিওতে একজন লোককে এক ফল বিক্রেতার সাথে তর্ক করতে দেখা যায়। ব্যবসা করার জন্য তাকে ফল বিক্রিতার কাছে টাকা দাবি করতেও দেখা যায়। 

লোকটি ফল বিক্রেতাকে হুমকি দিয়ে বলেন, “চোখ নামায় কথা ক। একদম সাইজ কইরালামু ধরলে। ডেইলি এইহানে ব্যবসা করতে হইলে পাঁচ/সাতশ টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। দুই টাকা নেই তোগরতে? তারপরও ত্যাড়ামি করস কিলাইগ্যা? আমার দিক তাকায়া কথা কইলে চোখ উঠায়া ফালামু।”

এ সময় একদল লোক বিষয়টি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন।  

ভিডিওটির উপর জুড়ে দেয়া লেখায় বলা হয়, “জামায়াত নেতার বড়ই চুরি।”

Image
এএফপির যোগ করা লাল ক্রস চিহ্নসহ ২২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি।

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে(আর্কাইভ লিংক)।

চাঁদার টাকা দিতে অসম্মতি জানানোর কারণে বিএনপির কর্মীরা জুলাই মাসে রাজধানী ঢাকায় এক ব্যক্তিকে দিন দুপুরে পাথর দিয়ে থেতঁলে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে(আর্কাইভ লিংক)। 

ফল বিক্রেতার কাছ থেকে কথিত জামায়াত নেতার চাঁদার টাকা আদায়ের দাবিতে ভিডিওটি অন্যত্র ফেসবুকে এবং ইনস্টাগ্রামে ছড়ানো হয়েছে। 

ভিডিওটির কিফ্রেম নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রিয়জন টিভির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি উচ্চ মানের সংস্করণ পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “বড়ই বিক্রেতার সাথে পাতিল তার এ কেমন আচরণ।”

পেজটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, পেজটি এর আগেও একই ধরনের কয়েক ডজন ক্লিপ প্রকাশ করেছে। সেসব ভিডিওতে কথিত জামায়াত নেতাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে, এখানেএখানে)। 

Image
এএফপির যোগ করা লাল ক্রস চিহ্নসহ অসত্য পোস্ট(বামে) এবং প্রিয়জন টিভির প্রকাশিত ভিডিওটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

এএফপি ফেসবুক পেজের ব্যবহারকারীর সাথে যোগযোগ করেছে। বিভিন্ন পোস্টে ক্লিপটিকে বিভ্রান্তিকরভাবে ছড়ানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। 

২২ অক্টোবর এস এম কাওসার আলম বলেন, “সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে আমরা ভিডিওটি তৈরি করেছি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের চাঁদাবাজি একটি সাধারণ ঘটনা। সমস্যটি তুলে ধরতে দুই বছর আগে আমরা ভিডিওটি তৈরি করি।”

আলমের পরিচালিত অন্য একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)। ওই ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে ক্যামেরার দিকে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলে দৃশ্যটি শেষ করতে দেখা যায়।    

তিনিবলেন, “আপনি নেতা হন আর যাই হন, এসব গরিব লোকদের সাথে কেন এমন আচরণ করেন? এটা কখনোই করা উচিৎ নয়।”

এএফপি এর আগেও সাজানো ক্লিপকে বাস্তব হিসেবে অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্ট খণ্ডন করেছে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ