ইন্দোনেশিয়ার বিক্ষোভের ভিডিওকে বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতার ঘটনা হিসেবে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে সেটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহিংসতার চিত্র বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে। ফুটেজটি প্রকৃতপক্ষে ইন্দোনেশিয়ার একটি বিক্ষোভের। আগস্ট মাসে একজন ডেলিভারি ড্রাইভারের হত্যাকাণ্ডের পর ওই সহিংসতার দেখা দেয়।  

১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “এই মুহূর্তে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দেশ।”

২৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে লোকজনকে রাস্তায় দৌড়াতে এবং ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ডে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। এ সময় রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীকে দেখা যায়। 

Image
লাল ক্রস চিহ্নসহ ৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

ছয় বছরের বিরতির পর ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছিল তখন একই ধরনের পোস্টে ফুটেজটি অন্যত্র ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে। 

ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জন্ম দিয়েছে এবং বর্তমান নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণকারী অনেক প্রার্থীই জুলাই গণঅভুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে (আর্কাইভ লিংক)। 

ছাত্রসংসদ নির্বাচনটি ২০২৬ সালের ফ্রেবুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান(আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)। 

কিন্তু ভিডিওটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতার নয়। 

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওর কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ২৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখের একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ভিডিওটি পাওয়া যায়(আর্কাইভ লিংক)। 

পোস্টটির ইন্দোনেশিয়ান ভাষার ক্যাপশনে বলা হয়, “মোবাইল ব্রিগেড সদর দপ্তরে বিক্ষোভ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, সন্ধ্যা নাগাদ জনতার ভিড় বেড়েই চলছে।” 

Image
অসত্য ভাবে ছড়ানো ক্লিপ(বামে) এবং ইনস্টগ্রামের ভিডিওটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

এএফপির রিপোর্ট অনুযায়ী আগস্টের শেষের দিকে ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে। আধাসামরিক পুলিশ ইউনিটের হাতে একজন তরুণ ডেলিভারি চালকের মৃত্যুর ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বিক্ষোভ তীব্র রুপ ধারণ করে(আর্কাইভ লিংক)

২৯ আগস্ট স্থানীয় চ্যানেল ত্রিজায়াএফএম-র একটি প্রতিবেদনে ভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা একই ধরণের একটি ভিডিও পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটিতে দৃশ্যমান রাস্তায় থামার চিহ্ন এবং রাস্তার পাশের অবকাঠামোসহ কিছু উপাদানের সাথে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার গুগল ম্যাপের স্ট্রিট ভিউয়ের মিলে রয়েছে(আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্য ভাবে ছড়ানো পোস্টের (বামে) এবং গুগল স্ট্রিট ভিউর ছবির মধ্যকার মিলগুলো চিহ্নিত করে তুলনামুলক স্ক্রিনশট

ভিডিওর বিভিন্ন অংশে ইন্দোনেশিয়ার পতাকার মতো লাল-সাদা পতাকাও দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
Screenshots of the video with the red and white flag highlighted by AFP

এএফপি এর আগেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘিরে ছড়ানো অন্যান্য অপতথ্য খণ্ডন করেছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ