রাজনৈতিক দলের চক্রান্ত ফাঁসের নামে ছড়ানো ভিডিওটি ‘সম্পূর্ণ অসত্য, এআই তৈরি’ বলে দাবি পুলিশের

২০২৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার জন্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। এ সময় কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয়। বাসে আগুন দিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানোর বিএনপি এবং শিবিরের গোপন চক্রান্ত পুলিশ ফাঁস করছে বলে ভিডিওটিতে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে। তবে তাঁরা এমন কোন বিবৃতি দেননি বলে এএফপিকে জানিয়েছেন ভিডিওতে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ছড়ানো ক্লিপিটিকে “পুরোপুরি অসত্য” বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

১২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “৫০ জন সমন্বয়কের পদত্যাগ এবং  ১৩ তারিখ বিএনপি এবং শিবিরের হামলার গোপন তথ্য ফাঁস।”

ভিডিওটিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলতে দেখা যায়: “৫০ জনের বেশি সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে এবং তারা আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ সমর্থন জানিয়েছে।”

“গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি, আগামীকাল ১৩ তারিখ বিএনপি এবং শিবির যানবাহনে আগুন দিবে এবং এর দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপাবে।”

Image
এএফপির যোগ করা ক্রস চিহ্নসহ ২৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার মধ্যে একই ধরনের ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি ছড়ানো হয় (আর্কাইভ লিংক)। 

এদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের প্রতিবাদ জানিয়ে ১৩ নভেম্বর দেশব্যাপী "লকডাউন" ডাকে আওয়ালী লীগ (আর্কাইভ লিংক)। পরে ১৭ নভেম্বর হাসিনার অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয় (আর্কাইভ লিংক)। 

কিন্তু বিএনপি ও শিবির অগ্নিকাণ্ড করে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানোর চক্রান্ত ফাঁস করে পুলিশের বিবৃতির বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। 

পুলিশের কয়েক মাস আগের পুরনো বিবৃতি

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির কিফ্রেম দিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে একই ধরণের একটি ছবি পাওয়া যায়, যা দৈনিক যুগান্তরের ২২ ফেব্রুয়ারির একটি প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে(আর্কাইভ লিংক)। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার।

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিও (বামে) এবং যুগান্তরের ছবির(ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

অন্য একটি কিওয়ার্ড সার্চে সংবাদ সম্মেলনটি নিয়ে একই দিনে সময় টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়(আর্কাইভ লিংক)। 

প্রতিবেদনে দেখানো ভিডিওতে বক্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার কণ্ঠস্বরটি অসত্যভাবে ছড়ানো ক্লিপের চেয়ে আলাদা দেখা যায়। 

ভিডিওটিতে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, "তিনজনকেই আমরা সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। লুন্ঠনকৃত মোবাইল এবং অন্যান্য যে সমস্ত টাকা বা যে সমস্ত স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে কাজ চলছে।"

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির বাম দিকে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো রবিউল ইসলাম ৩০ নভেম্বর এএফপিকে জানান যে, কোনও সমন্বয়কের পদত্যাগ নিয়ে কিংবা রাজনৈতিক দলের গোপন চক্রান্ত নিয়ে তাঁরা কোন বিবৃতি দেননি (আর্কাইভ লিংক)। 

তিনি বলেন, "এটা পুরোপুরি অসত্য এবং এআই দিয়ে তৈরি।" 

বাফালো ইউনিভার্সিটির তৈরি ডিপফেক-ও-মিটারে এএফপি ভিডিওটি যাচাইয়ে করে দেখেছে যে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরির ১০০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
ডিপফেক-ও-মিটারের বিশ্লেষণের ফলাফল

বাংলাদেশের  অস্থিতিশীলতা নিয়ে ছড়ানো অন্যান্য অপতথ্য খণ্ডন করেছে এএফপি।  

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ