থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে মন্দির নিয়ে বিতর্কের ভিডিও, বাংলাদেশে আরাকান আর্মির অনুপ্রবেশের নয়

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলায় সহিংস বিক্ষোভে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনার কয়েকদিন পর সামরিক পোশাক পরিহিত সৈন্যদের একটি ভিডিও বিভিন্ন পোস্টে ছড়িয়ে সেটিকে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বাংলাদেশে প্রবেশের ভিডিও বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ক্লিপটি বিতর্কিত সিমান্তে একটি মন্দিরে কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের সৈন্যদের মধ্যেকার একটি বাকবিতণ্ডার। ঘটনাটি খাগড়াছড়ির বিক্ষোভের দুই মাসেরও বেশি সময় আগের। 

৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “আরাকান আর্মি, বার্মার নাগরিক ধরতে ধরতে বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে পরেছে বাঙালি পরিবারের উপর হামলা করতে এসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়”।  

আরাকান আর্মি হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিম মায়ানমার অঞ্চলে পরিচালিত একটি সশস্ত্র জাতি গোষ্ঠী।

পোস্টে যুক্ত ৬,০০০ বারেরও বেশি ভিউ হওয়া  ১৪ সেকেন্ডের  ভিডিওতে একটি জঙ্গলে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত একদল লোককে দেখা যায়। 

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির ক্যাপশনে “বান্দরবান সীমান্ত” হ্যাশট্যাগটিও রয়েছে। 

Image
লাল ক্রস চিহ্নসহ ১৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলায় সহিংস সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার পর ভিডিওটি ফেসবুকেছড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিক্ষোভের সময় থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আট দিনের জন্য খাগড়াছড়ি অঞ্চলে ১৪৪ ধারা জারি করে কর্তৃপক্ষ(আর্কাইভ লিংক)

সম্প্রতি এক স্কুলছাত্রীকে কথিত ধর্ষণের অভিযোগে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা বাহিনী বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। 

তবে অনলাইনে ছড়ানো ক্লিপটি সাম্প্রতিক সংঘর্ষের দুই মাসেরও বেশি সময় আগের। এছাড়া বাংলাদেশে আরাকান আর্মির অনুপ্রবেশের বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। 

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওর কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ১৫ জুলাই থাই সংবাদমাধ্যম দি নেশনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সাথে একই ধরনের ছবি পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

প্রতিবেদন অনুসারে, ছবিগুলো ১৫ জুলাই একটি সংবেদনশীল সীমান্ত এলাকায় একটি বিতর্কিত খেমার মন্দিরের কাছে থাই এবং কম্বোডিয়ান সৈন্যরা একে অপরের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনার।

নিজেদের ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ (৫০০ মাইল) সীমান্তে বিতর্কিত মন্দির নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক বিরোধ আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষে পরিণত হয়, যার ফলে একজন কম্বোডিয়ান সৈন্য নিহত হয়। ওই ঘটনার পর মে মাস থেকে  প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছিল।

পাঁচ দিনের সংঘর্ষের অবসান হওয়ার আগে জুলাইয়ের শেষের দিকে আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয় এবং ৩০০,০০০ এরও বেশি লোক বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়(আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্ট(বামে) এবং দি নেশনের ছবির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে প্রসাত তা মুয়েন থম - অথবা খেমার ভাষায় প্রসাত তা মোয়ান থম - - নামক বিরোধটি একাধিক থাই এবং কম্বোডিয়ান মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনগুলোতে বিভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা ফুটেজ দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে, এখানে এবং এখানে)। 

প্রতিবেদনে অনুসারে উভয় পক্ষ পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক  করতে এবং যে কোন ধরনের সংঘর্ষ কমিয়ে আনতে সম্মত হয়।

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওতে সৈন্যদের পরিহিত পোশাকর সাথে ২৬ মার্চ মন্দিরে তোলা এএফপির ধারণ করা একটি ছবিতে দৃশ্যমান পোশাকের মিলে দেখা যায়।

Image
২৬ মার্চ ২০২৫ তারিখে ওদ্দার মিয়ানচে প্রদেশের কম্বোডিয়ান-থাই সীমান্তে বিতর্কিত প্রাচীন খেমার মন্দির প্রসাত তা মুয়েন থম, অথবা খেমার ভাষায় প্রসাত তা মোয়ান থম-এ একজন কম্বোডিয়ান সৈনিক ও একজন থাই সৈনিক করমর্দন করছেন। (AFP / TANG CHHIN Sothy)

এএফপি এর আগেও খাগড়াছড়ির অস্থিরতা নিয়ে অন্যান্য অসত্য দাবি খণ্ডন করেছে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ