বন্ডাই সৈকতে হামলাকারীকে ইসরায়েলি হিসেবে ভুলভাবে চিহ্নিত করে জাল ছবি প্রচার

১৪ ডিসেম্বর সিডনির প্রসিদ্ধ বন্ডাই সৈকতে একটি ইহুদি উৎসবে বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। হামলাটি ‘তাদেরই একজন’ চালিয়েছে বলে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা অসত্যভাবে দাবি করেন। হামলাকারীদের মধ্যে “ডেভিড কোহেন” নামে একজন ইসরায়েলি ব্যক্তি ছিল বলে অভিযোগ করেন তারা। তবে তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া কথিত ছবিতে এমন কিছু ত্রুটি রয়েছে, যা ছবিগুলোকে এআই তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরির ইঙ্গিত দেয়। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যে দেশটির সাম্প্রতিক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় অভিযুক্তদের সাজিদ আকরাম এবং তার ছেলে নাভিদ হিসেবে সনাক্ত করেছে।  

১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, “ফেইসবুক প্রোফাইলের স্ক্রীনশটসহ বিভিন্ন প্রমাণ দেখানো হয়েছে যে, হামলাকারী ইসরাইলী সেনা সদস্য তার নাম ডেভিড কোহেন।”

পোস্টটির সাথে তার ফেসবুক প্রোফাইলের কথিত স্ক্রিনশট দাবি করে কিছু ছবি যুক্ত করা হয়।  একটি ছবির উপর জুড়ে দেয়া লেখা বলা হয়, “ডিলিট করার আগে ফাঁস হওয়া বন্ডাই সৈকতে হামলাকারীর ফেসবুক প্রোফাইল। তার আসল নাম ডেভিড কোহেন এবং সে ইহুদি। সে ইসরায়েলের!” 

অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনির অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে বন্দুকধারীদের গুলিতে ১৫ জন নিহত হন এবং ৪২ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন (আর্কাইভ লিংক)। 

পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের মধ্যে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ভারতীয় নাগরিক। কয়েক দশক ধরে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছিলেন (আর্কাইভ লিংক)। পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে ওই ব্যক্তি মারা যান।

অন্য হামলাকারীর বয়স ২৪ বছর। তার অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট রয়েছে। তাকেও গুলি করা হয়েছিল এবং সে পুলিশি পাহারায় বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধী। 

এই হামলাকে “সম্পূর্ণ শয়তান প্ররোচিত ও নিজেদের ভূমিতে ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড” বলে অভিহিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ।

Image
এএফপির যোগ করা ক্রস চিহ্নসহ ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

১৫ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম বন্দুকধারীদের নাম সাজিদ আকরাম এবং তার ছেলে নাভিদ হিসেবে উল্লেখ করার পর পোস্ট ফেসবুকে এবং অন্যান্য ভাষায় একই দাবিতে ছড়ানো হয়। 

১৭ ডিসেম্বর কোমা থেকে জেগে ওঠার পর নাভিদের বিরুদ্ধে ১৫টি খুনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া একটি “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড” ঘটানো এবং ক্ষতির উদ্দেশ্যে বোমা পাতার অভিযোগও আনা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

কিন্তু “ডেভিড কোহেন”  নামের নাভিদের কোনও ছদ্মনাম ছিল বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

তাছাড়া কথিত ফেসবুক প্রোফাইলের ছবিতে বেশ কিছু ইঙ্গিত রয়েছে, যাতে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে বোঝা যায়। 

ভেরাএআই ডিটেকশন টুল দিয়ে যাচাই করে দেখা যায় যে, ছবিটি কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরির “শক্তিশালী প্রমাণ” রয়েছে। ইনভিড- উইভেরিফাই নামে পরিচিত ভেরিফিকেশন প্লাগইনের মাধ্যমে ভেরাএআই ডিটেকশন টুলটি ব্যবহার করা যায়।

Image
ভেরাএআই ডিটেকশন টুলের ফলাফলের স্ক্রিনশট

ছবিটি আরও গভীর বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, আসল ফেসবুক প্রোফাইল পেজের সাথে ছবিটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে এমন কিছু ত্রুটিও রয়েছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইঙ্গিত দেয়। 

প্রোফাইলের কিছু শব্দ—যেমন “পিপল” এবং “এনগেজ”—ভুল বানানে লেখা আছে। এছাড়া “অ্যাড নিউ ফ্রেন্ড” বাটনটি উপরের ডান কোণে নীল রঙে থাকার কথা, যা সাধারণ ফেসবুক প্রোফাইলে থাকে। 

Image
ছবিতে দৃশ্যমান অসঙ্গতিগুলোকে এএফপি কর্তৃক চিহ্নিত করে নেয়া স্ক্রিনশট

বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে গুলির ঘটনার পর বন্দুকধারীদের পরিচয়, বীরত্বপূর্ণভাবে হস্তক্ষেপকারী ব্যক্তির পরিচয় এবং এই হামলার পর নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতথ্যের ছড়াছড়ি দেখা যায়।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ