ভারতীয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের ভিডিওকে ছাত্রলীগ নেত্রীকে ধর্ষণের দৃশ্য হিসেবে অসত্যভাবে প্রচার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে অনলাইনে নানা ধরনের অসত্য তথ্য ছড়ানো শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু পোস্টে একটি ভিডিও ছড়িয়ে সেটিকে ছাত্রলীগের একজন কর্মীকে ‘ধর্ষণের পর ফেলে রাখা হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ক্লিপটি মূলত একজন ভারতীয় কমেডি ইউটিউবারের এবং এতে একজন মহিলাকে মাতাল হওয়ার দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায়। 

৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, “ঢাকা বনানীতে ছাত্রলীগ নেত্রীকে ধর্ষণ করে ফেলে যায় তিন যুবক।” 

পোস্টের সাথে যুক্ত ১৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে রাস্তার পাশে একটি পানির বোতল ও একজোড়া স্যান্ডেলসহ একজন নারীকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর খিঁচুনির মত উপসর্গ দেখা যায়। ভিডিওটি ১ লক্ষ ৭৩ হাজারের বেশি বার ভিউ হয়েছে।

দুর্বৃত্তরা ওই নারীকে নির্যাতন করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেছে বলে ভিডিওটিতে একজনকে বলতে শোনা যায়। 

Image
এএফপির যোগ করা লাল ক্রস চিহ্নসহ ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পতিত হওয়ার পর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম জাতীয় নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ভিডিওটি ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে ছড়ানো হয়। 

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতা বেড়েছে। ১২ ডিসেম্বর জুলাই অভুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা এবং সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফ ওসমান হাদীকে দিন দুপুরে গুলি করা হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান(আর্কাইভ লিংক)। 

এএফপি এর আগেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা সম্পর্কিত অন্যান্য অসত্য দাবি খণ্ডন করেছে। অন্যদিকে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অপতথ্যের প্রচারণা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম (আর্কাইভ লিংক)।

তবে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কোনো সম্পর্ক নেই। 

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় ভিডিওর একটি উচ্চ মানের সংস্করণ ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে 'নাপাতি হাজোয়ারী' নামে একটি কমেডি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছিল(আর্কাইভ লিংক)। 

চ্যানেলটিতে “ইউনিক কমেডিয়ান” লেখে একটি ব্যানার পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওতে দৃশ্যমান নারীকে চ্যানেলটির সব পোস্টে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্টের (বামে) এবং ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট

মূল ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে আসামের অন্যতম সরকারি ভাষা বোড়ো ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়।  

মহিলাটি মাতাল কি না এবং তিনি কেন এত বেশি মদ খেয়েছেন, লোকটিকে এই প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞেস করতে শোনা যায়। 

ওই ইউটিউবার একই ভিডিওটি তাঁর ফেসবুক পেজেও শেয়ার করেছেন। এদিকে তাঁর ইনস্টাগ্রাম বায়োতেও তিনি একজন “ইউনিক কমেডি ক্রিয়েট” বলে উল্লেখ করেছে (আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)। 

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য কন্টেন্ট নির্মাতা এবং ঢাকায় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছিল এএফপি, কিন্তু তাদের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ