সুদানের একজন মা ছেলেকে বন্দুকধারীদের হাত থেকে রক্ষা করছেন এমন ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে সেনাবাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটি এল-ফাশের দখল করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত নৃশংসতার বেশ কয়েকটি ছবির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও, একজন সুদানী মহিলা তাঁর ছেলেকে বন্দুকধারীদের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন এমন একটি ছবি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। 

"সুদান জা'লেমদের খপ্পরে পড়া এক মজলুম মা ও ছেলের বিদায়ি মূহুর্ত,” ২৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মা এবং শিশু একে অপরকে শক্ত করে ধরে বসে আছে একটি খাদের কিনারে, এবং সশস্ত্র কিছু লোক তাঁদের হুমকি দিচ্ছে যাদের লম্বা ছায়া ছবিতে দৃশ্যমান।

Image
এএফপির যোগ করা লাল ক্রস চিহ্নসহ ২৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ছবিটি একই অসত্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত হয়, ইংরেজি এবং ফ্রেঞ্চ ভাষার কিছু পোস্টেও ছবিটি দেখা যায়। 

এল-ফাশের দখল

সুদানের এই যুদ্ধ দুই বছরেরও বেশি সময় আগে শুরু হয়। সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যেকার ক্ষমতার লড়াই হিসেবে যার সূত্রপাত। সেই যুদ্ধ পরবর্তীতে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্র্রন পাওয়ার এক নৃশংস লড়াইয়ে পরিণত হয় (আর্কাইভ লিংক)।

আরএসএফের বিরুদ্ধে এল-ফাশেরে গণহত্যা এবং অন্যান্য নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)

নিকটবর্তী শহর তাওয়িলায় পৌঁছে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা এএফপিকে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, বাবা-মায়ের সামনে শিশুদের গুলি করা এবং পালানোর সময় লোকজনকে মারধর ও লুটপাটের ভয়াবহ দৃশ্যের কথা জানিয়েছেন।

আরএসএফ জানিয়েছে তারা প্রায় ১৮ মাস ধরে এল-ফাশের শহরটি অবরোধ করে রাখার পর অবশেষে ২০২৫ সালের অক্টোবরে পশ্চিম দারফুর অঞ্চ্লের সেনাবাহিনীর এই শেষ শক্ত ঘাঁটিটি দখল করেছে (আর্কাইভ লিংক)

এএফপির যাচাই করা একটি ভিডিওতে, একজন যোদ্ধাকে খুব কাছ থেকে নিরস্ত্র লোকদের গুলি করতে দেখা যাচ্ছে। আরেকটি ক্লিপে তাকে আরএসএফ যোদ্ধাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে কয়েক ডজন মৃতদেহ এবং পোড়া যানবাহনের পাশে উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে।

তবে, আসন্ন মৃত্যুর মুখোমুখি মহিলা এবং শিশুর সুদানের এই ছবিটি আসল নয়।

এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি

ছবিটি ভালো করে দেখলে দেখা যায় যে, এতে “@khoubaibf.bz” লেখা আছে।

অনলাইনে অনুসন্ধান করলে একই নামের একটি ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল পাওয়া যায়, যার বায়োতে "ক্রিয়েটিভ এআই স্পেশালিস্ট" লেখা আছে (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে তোলা।

এই অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি পোস্ট করা হয়। 

অসত্যভাবে শেয়ার করা ছবিটিও একই অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়, তবে এটি একটি অ্যানিমেশন হিসেবে ছবিটি শেয়ার করা হয়। ক্লিপটিতে, মা এবং শিশুটি নড়াচড়া করছে বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু সশস্ত্র লোকদের ছায়া নড়াচড়া করতে দেখা যাচ্ছে না -- এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওগুলোতে এই সাধারণ অসঙ্গতিটি প্রায়ই দেখা যায়।

২৯ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত এবং ১,০৯,০০০ বারেরও বেশি লাইক পাওয়া এই পোস্টটির সাথে একটি ক্যাপশন রয়েছে যা স্পষ্টভাবে বলে যে এটি এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে তিনটি হ্যাশট্যাগ রয়েছে: “#সুদান #এলফাশার #দারফুর” (আর্কাইভ লিংক)

Image
৩ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে তোলা মূল ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট।

ক্লিপটিতে উপরের দিকে আরবিতে লেখা আছে: "এল ফাশেরকে নীরবে নির্মূল করা হচ্ছে।" অসত্য পোস্টের ছবিতে এই অংশটি কেটে ফেলা হয়েছে। 

এএফপি ফরাসি ভাষায় একই দাবিটি খণ্ডন করেছে এখানে

নৃশংসতা

এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়, বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ। জাতিসংঘের মতে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে এই যুদ্ধ।

২৯ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সৌদি ম্যাটারনিটি হাসপাতালে ৪৬০ জন নিহত হওয়ার খবরের নিন্দা জানিয়েছে। এই হাসপাতালটি ছিলো এল-ফাশেরের সর্বশেষ আংশিকভাবে কার্যকর হাসপাতাল (আর্কাইভ লিংক)।

ইতিমধ্যে, জাতিসংঘ এবং রেড ক্রস আরএসএফ জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত "মৃত্যুদণ্ড, গণহত্যা এবং ধর্ষণের" রিপোর্ট পাওয়ার পর এই বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

৩১ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে, আরএসএফ ঘোষণা করে যে তারা এল-ফাশের দখলের সময় নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করেছে (আর্কাইভ লিংক)। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ