এআই তৈরি আকাশচুম্বী ফুটবল ভেন্যুর ছবি দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতারণা
- প্রকাশিত 11 নভেম্বর 2025, 12:20
- আপডেট করা হয়েছে 11 নভেম্বর 2025, 12:34
- 3 এক্স মিনিটে পড়ুন
- লেখক: Déborah CLAUDE, এএফপি বাংলাদেশ
- অনুবাদ এবং অভিযোজন Eyamin SAJID
কপিরাইট © এএফপি ২০১৭-২০২৫। এই কন্টেন্টের যেকোন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
২০৩৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ সৌদি আরব। ফুটবলের সর্ববৃহৎ আসরের জন্য নতুন মেগাসিটি প্রকল্পের আওতায় একটি রিয়েল এস্টেট কমপ্লেক্সের উপরে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা উন্মোচন করেছে দেশটি। তবে বিশ্বের প্রথম “স্কাই স্টেডিয়াম” নির্মাণে উপসাগরীয় দেশটির পরিকল্পনাকে চিত্রায়িত করে অনলাইনে ছড়ানো ছবি ও ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই দিয়ে তৈরি। অক্টোবরের শেষের দিকে ব্যাপকভাবে ছড়ানো এবং বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমকে প্রতারিত করা দৃশ্যটি এআই দিয়ে তৈরি বলে এএফপিকে জানিয়েছে দৃশ্যটির নির্মাতা। এদিকে একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে যে, ‘স্কাই স্টেডিয়ামের’ নকশাটি “সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট”।
একটি ফেসবুক পোস্টে একটি দীর্ঘ অবকাঠামোর উপরে একটি খোলা ফুটবল স্টেডিয়ামের ছবি যুক্ত করে ক্যাপশনে বলা হয়, “সৌদি আরবের ভবিষ্যত শহর 'নিওম' (Neom) সিটিতে মরুভূমি থেকে ৩৫০ মিটার উপরে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।”
“এটি হবে বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্টেডিয়াম, যা সম্পূর্ণ নবায়নযোগ্য শক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে এবং ২০৩২ সালের মধ্যে এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্টেডিয়ামটি 'দ্য লাইন' নামক এক পরিকল্পিত শহরের অংশ হবে।”
বেশ কয়েকটি ক্রীড়া বিশেষায়িত ফেসবুক গ্রুপ এবং মূলধারারসংবাদমাধ্যম - এই অসত্য দাবিটি শেয়ার করেছে। অন্যরা টাওয়ারটি ঘিরে বিশ্বকাপ ট্রফির আকৃতির মতো একটি ভিডিও ছড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষা এবং সামাজিক মাধ্যমে অসত্য দাবিটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে রুয়ান্ডা ভিত্তিক একজন এক্স ব্যবহারকারীর পোস্ট ২৯ অক্টোবর ডিলিট হওয়ার আগে ৩৪ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে।
এনইওএম স্টেডিয়াম নামে সৌদি আরবে একটি উঁচু স্টেডিয়ামের পরিকল্পনা আছে। স্টেডিয়ামটি একই নামে পরিকল্পিত ভবিষ্যত নতুন শহরের ছাদে তৈরি করা হবে। এটি দেশটির ডি ফ্যাক্টো লিডার ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের মস্তিষ্কপ্রসূত পরিকল্পনা(আর্কাইভ লিংক)।
৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লোহিত সাগর মেগাসিটি প্রকল্পটি সৌদি আরবকে একটি প্রধান সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া গন্তব্যে রূপান্তরিত করার উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূল চালিকাশক্তি। প্রকল্পটিতে মরুভূমি জুড়ে ১৭০ কিলোমিটার (১০০ মাইলেরও বেশি) বিস্তৃত আয়না-ঘেরা আকাশচুম্বী ভবন থাকবে (আর্কাইভ লিংক)।
৪৮টি ফুটবল দলের খেলা পরিচালনার জন্য এক ডজনেরও বেশি ফুটবল স্টেডিয়াম এবং সেই সাথে ম্যাচ দেখতে ধনী উপসাগরীয় রাষ্ট্রটিতে গমনকারী লাখ লাখ ভক্ত সংস্থাপনের জন্য বড় ধরনের অবকাঠামোগত প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য দেশটির কাছে এক দশকেরও কম সময় হাতে আছে।
‘সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট’
কিন্তু অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়ানো একটি আকাশচুম্বী ভবনের উপরে ফুটবল স্টেডিয়ামের ছবিটি নতুন স্টেডিয়ামের নকশা ধারণা নয় বলে জানিয়েছেন বিষয়টির সাথে জড়িত এক ব্যক্তি।
২৯ অক্টোবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি এএফপিকে জানান, “এই নকশাটি সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট এবং সৌদি আরব যা পরিকল্পনা করছে, তার সাথে এর কোনও মিল নেই।”
“এমন নকশা সরকারি কোনও সূত্রে প্রকাশিত হয়নি।”
একই সাথে এনইওএম প্রকল্পের অফিসিয়াল এক্স পেজে এমন কোনও নকশার চিহ্ন খুঁজে পায়নি এএফপি। এছাড়া ২০৩৪ বিশ্বকাপের জন্য সৌদি আরবের দরপত্রেও এমন কোনও নকশা দেখা যায়নি(আর্কাইভ লিংক এখানে ও এখানে)।
‘এআই কনসেপ্ট’
টিকটকে কিওয়ার্ড সার্চে একজন ইউজারের অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্টের মত একই দৃশ্য দেখা যায়(আর্কাইভ লিংক এখানে ও এখানে)।
অ্যাকাউন্টটি এআই দিয়ে বানানো ফিউচারিস্টক শহর, ভবন এবং সেতুর দৃশ্য প্রকাশ করেছে। অ্যাকাউন্টির বিবরণে বলা হয়, “ভবিষ্যৎ, কল্পনাপ্রসূত এবং জীবন্ত।”
নির্মাতা একই ক্লিপটি তাঁর ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও আপলোড করেছেন। ইনস্টাগ্রামের পোস্টটি ১১ লাখের বেশি লাইক পেয়েছে (আর্কাইভ লিংক এখানে ও এখানে)।
উভয় সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “আকাশচুম্বী স্টেডিয়ামের নকশাকে আকাশপথে ঘুরে দেখা।”
দৃশ্যটি যখন তৈরি করেছিলেন তখন সৌদি আরবের কোনও প্রকল্প সম্পর্কে কোনও জ্ঞান ছিল না ব্যাখ্যা করে নির্মাতা তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেন, “একটি সাধারণ এআই ধারণা হিসেবে যা শুরু হয়েছিল, তা এখন নিজস্ব জীবন ধারণ করেছে। আমাদের 'স্কাই স্টেডিয়াম' নকশা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।”
ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদনে ভিডিওটির নির্মাতাকে ব্রিটেনে বসবাসকারী ৩৪ বছর বয়সী লিয়াম হাউস হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক) ।
৩১ অক্টোবর যোগাযোগ করা হলে হাউস এএফপিকে নিশ্চিত করেন যে, তিনিই ভিডিওটির নির্মাতা এবং বিষয়টি নিয়ে তিনি ডেইলি মেইলকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
এএফপি এর আগেও এআই দিয়ে তৈরি অসত্যভাবে ছড়ানো অন্যান্য দাবি খণ্ডন করছে।
এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?
আমাদের সাথে যোগাযোগ