ভিডিওটি চীনের মাছ ধরার জাহাজের, গাজাগামী নৌবহরের নয়

চীনের উত্তরাঞ্চলে মাছ ধরার জাহাজের একটি ভিডিওকে গাজা অভিমুখে মানবিক ত্রাণ এবং ফিলিস্তিনিপন্থী অধিকার কর্মীদের বহনকারী নৌবহর হিসেবে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে অসত্যভাবে ছড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্লেষণে ফুটেজটির সাথে গ্লোবাল সুমুদ নৌবহরের ছবির সাথে কোনও মিল পাওয়া যায়নি।

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত একটি ফেসবুক রিলের ক্যাপশনে বলা হয়, “আজ ১১ই সেপ্টেম্বর নৌবহরটি ফিলিস্তিনের সমুদ্রসীমায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।” 

ভিডিওটিতে শত শত নৌকা একসাথে সমুদ্রপথে যাত্রা করতে দেখা যায়।

“কয়েকদিন আগে বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো ইতিহাসের অন্যতম বিশাল নৌবহর। এর লক্ষ্য অবরুদ্ধ গাজায় পৌঁছে অবরোধ ভাঙা। ৪৪টি দেশের শত শত মানুষ একসাথে হয়েছেন। মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে,” ক্যাপশনটিতে আরও বলা হয়।

ভিডিওটি এমন সময়ে ছড়ানো হয়েছে যখন গাজা অভিমুখে ত্রাণবহরকারী নৌবহরের আয়োজক এবং ফিলিস্তিনিপন্থী অধিকার কর্মীরা ৯ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়ার উপকূলে তাদের একটি নৌকা সন্দেহভাজন ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায়(আর্কাইভ লিংক)।

তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে তারা “পূর্বপরিকল্পিত আগ্রাসনের” বিষয়টি তদন্ত করছেন। 

Image
লাল ক্রস চিহ্নসহ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

ভিডিওটি অন্যত্র এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়। 

ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের চলমান যুদ্ধের মধ্যে গাজায় ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট উপশমে সাহায্য করবে বলে আশা করছে এই নৌবহর (আর্কাইভ লিংক)।

ইসরায়েলের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এএফপির তৈরি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলার সূত্র ধরে যুদ্ধ শুরু হয়। ওই হামলার ফলে ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে কমপক্ষে ৬৪,৮৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচনা করে জাতিসংঘ।  

সংঘাতের ফলে আগস্ট মাসে প্রায় দশ লাখের বেশি লোকের বসতি গাজা শহর এবং এর আশেপাশে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে জাতিসংঘ। তবে ইসরায়েল উপকূলীয় অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষের অস্তিত্ব অস্বীকার করে। 

চীনের মাছ ধরার জাহাজ

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে, একই ক্লিপটি ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত গ্লোবাল টাইমস ট্যাবলয়েড বিলিবিলিতে প্রকাশ করা হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির চীনা ভাষার লেখায় বলা হয়, “১ সেপ্টেম্বর দুপুরে, বোহাই এবং পীত সাগরে গ্রীষ্মকালীন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়, একই সময়ে শানডং প্রদেশের উপকূলে মাছ ধরার নৌকাগুলো যাত্রা শুরু করে।”  

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ক্লিপ(বামে) এবং বিলিবিলির ভিডিওটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

অপর একটি রিভার্স ইমেজ সার্চে মাছ শিকারের উপর চার মাসের গ্রীষ্মকালীন নিষেধাজ্ঞার অবসান নিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিজিটিএন-এর আওতাধীন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চায়না প্লাস কালচারে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের একটি ক্লিপ পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

পোস্টটিতে বলা হয়, “চার মাসের গ্রীষ্মকালীন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে শেষ হওয়ার সাথে সাথে পীত সাগর এবং বোহাই সাগরের বন্দরগুলো থেকে ৩০,০০০ বেশি মাছ ধরার জাহাজ যাত্রা শুরু করেছে। হাজার হাজার উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য একটি নতুন মৌসুমের সূচনা।” 

ক্লিপটির নিবিড় পর্যবেক্ষণে নৌকাগুলোতে কালো, সাদা এবং সবুজ ফিলিস্তিনি পতাকা নয়, বরং চীনের জাতীয় পতাকার মতো লাল রঙের পতাকা উড়তে দেখা যায়।

Image
এএফপি কর্তৃক নৌকায় পতাকা চিহ্নিত করে অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওর স্ক্রিনশট।

তিউনিসিয়ায় নোঙর করার সময় এএফপি কর্তৃক তোলা গ্লোবাল সুমুদ নৌবহরের ছবিতে নৌকাগুলোকে ফিলিস্তিনের পতাকায় সজ্জিত দেখা যায়, অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওতে দৃশ্যমান জাহাজগুলোর সাথে যার মিল পাওয়া যায়না। 

Image
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইজরায়েলের অবরোধ ভাঙতে গাজা উপত্যকায় নির্ধারিত যাত্রা শুরুর আগে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌকাগুলো তিউনিসিয়ার বিজার্তে বন্দরে জড়ো হয়েছে। এএফপি-র তোলা ছবি। (AFP / FETHI BELAID)

এএফপি গাজা যুদ্ধ সম্পর্কিত অন্যান্য অসত্য দাবি খণ্ডন করেছে এখানে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ