রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলার ভিডিওকে ইসরায়েলে ইরানের হামলার বলে প্রচার

২০২৩ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার একটি ভিডিওকে পুনরায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে সেটিকে ২০২৪ সালে ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ইরানের মিসাইল হামলার পর একটি বিস্ফোরণের চিত্র বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে। ইরানের এক ঝাঁক মিসাইল ইসরায়েলে আঘাত হানার পর বাংলার পাশাপাশি অন্যভাষায় কয়েক লাখ ভিউ হওয়া পোস্টটি অনলাইনে ছড়াতে শুরু করে। এসব মিসাইলের অধিকাংশ ধ্বংস করা হলেও কয়েকটি মিসাইল কোন ধরনের প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই বিমান ঘাঁটিতে আঘাত করে।

১ লা অক্টোবর ২০২৪ একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "আজ সন্ধ্যায় ইরান থেকে ইজরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে চালানো মিসাইল হামলার ফলাফল। হামলায় ১০০টির ও বেশি মিসাইল ব্যবহার করেছে ইরান যা তেল আবিবসহ অন্যান্য শহরে আঘাত হেনেছে ঠিক এভাবেই। ইজরায়েলের গর্বের আয়রন ডোম হামলা ঠেকাতে অনেকটাই ব্যর্থ।"

পোস্টিতে যুক্ত একটি ভিডিওর ওপর জুড়ে দেয়া টেক্সে বলা হয়, "১ অক্টোবর ২০২৪--তেল আবিব নাউ।" যাতে বোঝা যাচ্ছে যে হামলার ঘটনাটি ওই মাসে ইসরায়েলে হয়েছে।

Image
১৪ নভেম্বর ২০২৪ এ নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

গাজায় হামাসকে সমর্থন করে ইসরায়েলের চির শত্রু ইরান। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনি মিলিট্যান্ট গ্রুপের আক্রমণকে স্বাগত জানিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের অফিসিয়াল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এএফপির করা তালিকা অনুযায়ী, ওই হামলায় ১২০৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোক। জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া ২৫১ জনের মধ্যে ৯৭ জন এখনও মিলিট্যান্টদের হাতে আটক এবং ৩৪ মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী (আর্কাইভ এখানে)।  

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তথ্য মতে, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৪১, ৯০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোক। জাতিসংঘ নিহতদের এই সংখ্যাকে বিশ্বাস যোগ্য বলে মন্তব্য করেছে।

লেবানন, সিরিয়া এবং ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইরানের অন্য সহযোগিদের টার্গেট করতে গিয়ে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ নানা দিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

১ অক্টোবর ২০২৪ ইসরায়েল ভূখণ্ডের দিকে এক ঝাঁক মিসাইল নিক্ষেপ করে ইরান। এসব মিসাইলের অধিকাংশ ধ্বংস করা হলেও কয়েকটি মিসাইল কোন ধরনের প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই বিমান ঘাঁটিতে আঘাত করে। ইসরায়েল এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে, যা সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে এখানে ছড়ানো হয়েছে।

বাংলা ভাষার পাশাপাশি ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ার ভাষাতেও ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে।

তবে ভিডিওটি ২০২৩ সালে রাশিয়ার ওপর ইউক্রেনের ড্রোন হামলার।

ড্রোন হামলা

গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে ক্লিপটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ইংরেজি গণমাধ্যম এনবিসি এবং সিএনএন-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফুটেজটি মস্কোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার (আর্কাইভ এখানেএখানে)।

নিচে অসত্য পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং এনবিসি প্রকাশিত ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং এনবিসি প্রকাশিত ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

'মর্মান্তিক ভিডিওতে রাশিয়ায় ড্রোন বিস্ফোরণ' এমন শিরোনামে সিএনএন এর ভিডওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "একজন পথচারীর ধারণ করা ভিডিওতে ইউক্রণের যুদ্ধকে রাশিয়ার রাজধানীতে টেনে আনা ধারাবাহিক হামলাগুলোর একটিতে মস্কোতে একটি ভবনে ড্রোন আঘাত করার মূহুর্ত।"

২০২৩ সালের ৩০ জুলাই রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ওই রাতে দেশটি দুটি পৃথক ইউক্রেনীয় ড্রোন প্রতিহত করেছিল, একটির লক্ষ্যবস্তু ছিল রাজধানী এবং অন্যটির টার্গেট ছিল ক্রাইমিয়া (আর্কাইভ এখানে)।

ওই সময় এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের হামলায় দুটি অফিস ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয় (আর্কাইভ এখানে)।

এএফপির ফটোগ্রাফারের মতে, হামলায় একটি ভবনের কয়েকটি জানালা উড়ে যায়, স্টিলের বিম বেরিয়া আসে এবং নথিপত্র নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।

রাশিয়ার সার্চ ইঞ্জিনের ম্যাপিং ট্যুল ইয়ানডেস্ক ম্যাপসের সাহায্যে সার্চ কিছু দৃশ্যগত প্রমাণ পাওয়া যায়, যা দ্বারা বোঝা যায় যে, ভিডিওটি মস্কো শহরের পশ্চিমা অংশের বাণিজ্যিক জেলায় অসত্য পোস্টের ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।   

নিচে অসত্য পোস্টের ভিডিটিতে দৃশ্যমান ভবন ও রাস্তা(বামে) এবং ইয়ানডেস্ক ম্যাপসে (ডানে) মস্কো শহরের ভবন ও রাস্তার তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল (আর্কাইভ এখানে)।

Image
অসত্য পোস্টের ভিডিটিতে দৃশ্যমান ভবন ও রাস্তা (বামে) এবং ইয়ানডেস্ক ম্যাপসে (ডানে) মস্কো শহরের একই লোকেশনের তুলনামূলক স্ক্রিনশট

নিচে এএফপির ফটোগ্রাফারের তোলা একটি ছবিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার পর মস্কোতে একটি ক্ষতিগ্রস্ত অফিস ভবন।

Image
২০২৩ সালের ৩০ জুলাই এএফপির তোলা ছবিতে মস্কোর বাণিজ্যিক জেলায় একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দৃশ্য(এএফপি/আলেকজান্ডার নেমেনভ)

এর আগেও এএফপি ইসরায়েলের উপর ইরানের ড্রোন হামলা নিয়ে ছড়ানো একই ধরনের দাবি খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছে এখানেএখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ