ভারতের ভিডিওকে নেপালে মোদি সমর্থকদের মিছিল হিসেবে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালের “জেন জি” তরুণদের বিক্ষোভের ফলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যানার হাতে লোকজনের মিছিল করার দৃশ্যটি মোদির মত একই রকম নেতার দাবিতে নেপালি নাগরিকদের মিছিলের নয়। ভিডিওটি আসলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সিকিম রাজ্যের এবং কয়েক মাস আগে মোদির সিকিম সফরের আগে তাঁর সমর্থনে বিভিন্ন পোস্টে ছড়ানো হয়। 

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “নেপালের মহিলারা নরেন্দ্র মোদি জির ছবি নিয়ে মিছিল করছেন। এটাই নতুন ভারতের ছবি বিশ্বনেতা নরেন্দ্র মোদি জি।”

ভিডিওটিতে একদল মানুষ মোদির ছবি সংবলিত একটি ব্যানার নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। 

Image
লাল ক্রস চিহ্নসহ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

একই ধরনের পোস্টে ফুটেজটি অন্যত্র ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে। 

৮ সেপ্টেম্বর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুর্নীতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তরুণ বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা নিজেদেরকে “জেন জি” আন্দোলন নামে অভিহিত করেন (আর্কাইভ লিংক)।

পুলিশের মারাত্মক দমন-পীড়নের পর সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ও সরকারি ভবন পুড়িয়ে দেওয়ার পর প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ২০০৮ সালে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান এবং রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পর হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ এই বিক্ষোভে কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত এবং আরও অনেক আহত হয়েছেন(আর্কাইভ লিংক)

নেপালের ৭৩ বছর বয়সী প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আগে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে তোলা দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যতের দাবি পূরণ এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয় (আর্কাইভ লিংক)।

তবে অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটিতে নেপালি নাগরিকদেরকে মোদির মতো নেতার দাবিতে মিছিলের নয়। এটি মে মাসে সিকিম রাজ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত সফরের আগে তাঁর সমর্থনে একটি সমাবেশের ভিডিও। 

ভারতের ফুটেজ

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওর কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে, একই ভিডিওটি মে মাসের ৩০ তারিখে একটি ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করা হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)

ভিডিওর ব্যানারে লেখা আছে, “সিক্কিমের লিম্বু উপজাতিরা, ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজিকে সিকিম রাজ্যে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে।”

Image
এএফপি কর্তৃক হাইলাইট করা টেক্সটসহ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ধারণ করা ফেসবুক ভিডিওটির স্ক্রিনশট

ব্যানারটিতে নীল কালিতে দৃশ্যমান “সুখিম ইয়াকথুং সাপসোক সংচুম্বো” লেখাটির কীওয়ার্ড অনুসন্ধানে একই নামের একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়। পেজটিতে ৩০ মে  তারিখে একই রকম দৃশ্যসহ একটি দীর্ঘ ভিডিও প্রকাশ করা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

ফুটেজটি সিকিমে ধারণ করা হয়েছে বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন পেজটির এডমিনরা।   

 ১৬ সেপ্টেম্বর পেজটির একজন এডমিন এএফপিকে বলেন, “আমরা আমাদের পেজে একই রকম কিছু ভিডিও শেয়ার করেছি। অনেক স্থানীয় মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনে বের হওয়া মিছিলের ভিডিও ধারণ করছিলেন।”

মোদির সিকিম সফর সম্পর্কে একাধিক ফেসবুক পোস্টে একই রকম ভিডিও দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)।

অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে দৃশ্যমান একটি দোকানের লাল বিলবোর্ড এবং রাস্তার পাশের স্থাপনাসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এএফপি ফুটেজটি সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের একটি জায়গা হিসেবে জিওলোকেট করে (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্টের(বামে) এবং গুগল স্ট্রিট ভিউর ছবির মধ্যকার মিলগুলো চিহ্নিত করে তুলনামুলক স্ক্রিনশট

সিকিম সরকারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, ২৯ মে ভারতের সাথে রাজ্যটির অন্তর্ভুক্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল ভাষণ দেন মোদি(আর্কাইভ লিংক)। 

বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শারীরিকভাবে যোগ দিতে পারেন নি। তবে তিনি সিকিমের অন্যতম সরকারি ভাষা এবং সাধারণ ভাষা নেপালি ভাষায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং তিনি এই বছরের শেষের দিকে সফরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও মোদির মন্তব্য প্রচার করেছে (আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)। 

সাবেক সার্বভৌম রাজ্য সিকিম আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৫ সালের ১৬ মে একটি ভারতীয় রাজ্যে পরিণত হয়(আর্কাইভ লিংক)। 

এএফপি নেপালের বিক্ষোভ সম্পর্কিত অন্যান্য অপতথ্য এখানে এবং এখানে খণ্ডন করেছে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ