গাজার উদ্দেশ্যে খাবারভর্তি বোতল সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো যখন গাজার দুর্ভিক্ষ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা কিছু ছবি ছড়িয়ে সেগুলোকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আশায় মিশরীয়দের চাল, শুকনা খাবার এবং অন্যান্য দানাদার খাদ্য বোতলে করে সমুদ্রে ছুঁড়ে মারার দৃশ্য বলে অসত্যভাবে দাবি করেছে। যদিও মিশরীয়দের এই ধরনের প্রতীকী উদ্যোগ  সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু ব্যাপকভাবে ছড়ানো ছবিগুলোতে দৃশ্যমান কিছু অসঙ্গতি ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরির ইঙ্গিত দেয়। 

২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "মিশরের জনতা বোতলে করে সাগরের ঢেউয়ে খাদ্য ভাসিয়ে দিচ্ছে, যেনও আল্লাহর ইচ্ছায় সাগরের ঢেউ এই খাবার গাজাবাসীর কাছে পৌঁছে দেয়।" 

পোস্টের সাথে যুক্ত তিনটি ছবিতে একদল লোককে চাল ও আটা ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে দেখা যায়।

Image
লাল ক্রস চিহ্নসহ ২০ আগস্ট ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ছবিটিকে বাস্তব্য মনে করে অন্যত্র ফেসবুকে ছড়ানো হয়। এছাড়া ইতালীয়, ফরাসি এবং আরবি ভাষায়ও একই দাবিতে ছড়ানো হয়েছে। 

২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখের একই রকম দাবিতে ফেসবুক পোস্টে অন্য একটি ছবি ছড়ানো হয়, যেখানে খাবার এবং নোট ভর্তি বেশ কয়েকটি বোতল পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়। 

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “আল্লাহ তায়ালার কুদরতি উছিলায় পৌছে দিন ক্ষু'ধার্ত গা*যাবাসীর কাছে!” 

Image
লাল ক্রস চিহ্নসহ ২০ আগস্ট ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

একই ধরনের পোস্টে ছবিটি অন্যত্র ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে, যেখানে অনেককেই ছবিটিকে বাস্তব বলে বিশ্বাস করতে দেখা গেছে। 

একজন লিখেন, “আল্লাহ রহম করুন। নদী পথে বা সাগর পথে কোন যোগসূত্র থাকলে- অলৌকিক ভাবে পৌঁছে যেতেও পারে।” 

২ মার্চ ইসরায়েল প্রায় পুরোপুরি অবরোধ আরোপের পর ফিলিস্তিনিরা যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য তোড়জোড় শুরু করে, তখন ছবিগুলি অনলাইনে ছড়ানো হয়। 

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সতর্কবার্তা দিয়ে জানায় যে, গাজা উপত্যকা “একটি পূর্ণ মাত্রার দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে”। অন্যদিকে হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে,  প্রায় ২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ৬০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে (আর্কাইভ লিংক)। 

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হলে চলমান যুদ্ধের সূচনা হয়। এএফপির এক পরিসংখ্যান অনুসারে, হামাসের হামলায় নিহদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। 

যুদ্ধবিরতি আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর মার্চ মাসে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছিল ইসরায়েল। এরপর মে মাসের শেষের দিকে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটিতে ত্রাণ প্রবেশের সামান্য অনুমতি দেওয়া শুরু করে দেশটি। তবে গাজায় ত্রাণের ট্রাক এবং বিমান থেকে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতির ক্ষেত্রে “কৌশলগত বিরতি” দেওয়া শুরু করে। 

মিশরীয়দের প্রতীকী উদ্যোগ, “দুর্ভিক্ষের চিত্র দেখে আতঙ্কিত মিশরের নাগরিক”-বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও অনলাইনে ছড়ানো ছবিগুলোতে কিছু দৃশ্যগত অসঙ্গতি রয়েছে,  যা থেকে ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরির ইঙ্গিত পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক এখানেএখানে)। 

দৃশ্যগত অসঙ্গতি

হাইভ ইমেজ ভেরিফিকেশন ট্যুল ব্যবহার করে পানিতে বোতল ভাসিয়ে দেওয়ার ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, দৃশ্যগুলো এআই দিয়ে তৈরির ৯৯.৯ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে।  

Image
রঙিন বক্স যোগ করে ৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখে নেয়া বিভ্রান্তিকর পোস্ট(বামে) এবং হাইভ ট্যুলের ফলাফলের (ডানে) স্ক্রিনশট

একটি ছবিতে সামনের দিকে একটি বিকৃত বুড়ো আঙুলসহ একটি, পদার্থবিদ্যার নিয়মের বিপরীতে সম্পূর্ণ ভরা বোতলকে সমুদ্রের উপর সোজা অবস্থায় ভাসমান থাকা এবং লোকগুলোকে অস্বাভাবিকভাবে একই দিকে মুখ করে থাকার দৃশ্যগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ছবির বৈশিষ্ট্য।

যদিও এআই-দিয়ে তৈরি দৃশ্য শনাক্ত করার কোনও নির্ভুল পদ্ধতি নেই, তবে ওয়াটারমার্ক এবং দৃশ্যমান অসঙ্গতি এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে। কারণ জেনারেটিভ এআই-তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনও ত্রুটি ঘটে।

অসত্যভাবে ছড়ানো দ্বিতীয় ছবিতে প্লাস্টিকের বোতলগুলো পানির উপর অস্বাভাবিকভাবে ভাসতে দেখা যায়। এছাড়া বোতলগুলোর ভিতরে থাকা জিনিসপত্রের আকার বোতলের মুখের চেয়ে বড় দেখা যাচ্ছে। 

Image
অসত্য ছবির দৃশ্যগত ত্রুটি চিহ্নিত করে স্ক্রিনশট

এর আগেও এআই দিয়ে তৈরি ছবি ও ভিডিওকে ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের সাথে সম্পৃক্ত করে ছড়ানো অন্যান্য পোস্ট খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছে এএফপি। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ