ইসরায়েলি গুপ্তচরকে রকেটের সাথে বেঁধে রাখার ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে জড়িত সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর ইরানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর, রকেটের সাথে এক ব্যক্তিকে বেঁধে রাখার একটি ঝাপসা ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে সেটিকে গুপ্তচরদের "ফেরত পাঠানোর" তেহরানের পদ্ধতি বলে অসত্য ভাবে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ছবিটিতে থাকা কিছু সংকেত ইঙ্গিত করে যে, এটি এআই বা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী। 

১৭ জুন ২০২৫ তারিখের একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মো/সা/দের এক সদস্য ইরানে ঢুকে গুপ্তহত্যা, সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের হ/ত্যা করে পালাচ্ছিল। ইরানি গোয়েন্দারা তাকে পাকড়াও করে এমন এক বিচার দিল, যা ইতিহাসে লেখা থাকবে। তাকে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সাথে বেঁধে সোজা ইসরাইলে পাঠিয়ে দিল—"যেখানে থেকে এসেছো, সেখানেই ফিরে যাও!" এই ছিল তাদের জবাব।"

ক্যাপশনে আরও বলা হয়, "প্রযুক্তি ও প্রতিশোধের এমন সমন্বয় দেখে গোটা দুনিয়া স্তব্ধ। কেউ চা খাচ্ছিল, কেউ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। সাবাস ইরা*ন! সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার অভিনব প্রদর্শনী।"

ঝাপসা ছবিটিতে দেখা যায় একটি লোককে একটি রকেটের সাথে বাঁধা হয়েছে, যেই রকেটে ইরানের পতাকা দেখা যাচ্ছে। 

Image
লাল ক্রস চিহ্ন যোগ করে ১৩ জুলাই ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ইরানের পুলিশের হাতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে জড়িত দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর ১৫ জুন দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর অনলাইনে অসত্য দাবিটি ছড়ানো হয় (আর্কাইভ লিংক)

১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলায় বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যের দুই চির শত্রুদের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই এই গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে(আর্কাইভ লিংক)।

পাল্টা জবাবে ইরান ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায এবং ইসরায়েলের ডিপ ইন্টেলিজেন্স পেনিট্রেশন উন্মোচনের ফলে ইরানে একটি বড় গুপ্তচর সন্ধান অভিযানের সূত্রপাত হয়(আর্কাইভ লিংক)।

নরওয়ে-ভিত্তিক এনজিও ইরান হিউম্যান রাইটসের মতে, সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ছয়জনকে এবং অন্যান্য অভিযোগে আরও কয়েক ডজন মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত অভিযোগে সংঘাতের সময় বা পরবর্তী সময়ে এক হাজারেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২৪ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে অবসান হওয়ার আগে এই যুদ্ধে ইরানে ১,০০০ জনেরও বেশি এবং ইসরায়েলে কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হন। 

ছবিটি একই ধরনের পোস্টে এখানে এবং এখানে ছড়ানো হয়।

তবে ইরানের পক্ষ থেকে মানুষকে রকেটের সাথে বেঁধে রাখার কোনও প্রকার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। 

গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে ছবটির উচ্চমানের একটি সংস্করণ পাওয়া যায়, যেখানে ইরানের পতাকার  একটি অর্থহীন উপস্থাপনা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্য ফেসুবক পোস্টের ছবি(বামে) এবং ইরানের পতাকার তুলনামূলক স্ক্রিনশট

ছবিতে থাকা লোকটির মাথা বিকৃত এবং রকেট উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্মের রেলিংগুলোকে এলোমেলো দেখা যায়।জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি স্বত্ত্বেও দৃশ্যমান কিছু অসঙ্গতি অসত্য ছবি  সনাক্ত করার সর্বোত্তম উপায়। 

Image
এএফপির হাইলাইট করা দৃশ্যমান অসঙ্গতি সহ ছড়ানো ছবিটির স্ক্রিনশট

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ছড়ানো অন্যান্য অপতথ্য খণ্ডন করে এএফপি প্রতিবেদন করেছে এখানে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ