লেবাননের হাসপাতালের ভিডিওকে ইসরায়েলে ইরানের হামলা হিসেবে অসত্যভাবে প্রচার

পারমানবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান চিরশত্রু ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার চালানোর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে একটি ভিডিও ছড়িয়ে সেটিকে ইরানের মিসাইল হামলায় ইসরায়েলের অবস্থা হিসেবে অসত্য ভাবে দাবি করা হয়। ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করলেও ভিডিওটি ইসরায়েলের নয়, ফুটেজটি দক্ষিণ লেবাননের একটি হাসপাতালের দৃশ্য। 

১৪ জুন ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, "অপারেশন ট্রু প্রমিজ- ৩ র লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় ইসরাইলের ১৫০টিরও বেশি পয়েন্ট রয়েছে। ইরান দেশীয় বিশেষজ্ঞদের তৈরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে অভিযানগুলো চালাচ্ছে”। 

কয়েকটি ফুটেজ নিয়ে তৈরি ভিডিওটিতে একটি ভবনের কাছে একটি বিস্ফোরণ ঘটে এবং এতে ভবন সংলগ্ন একটি গাড়ির পার্কিং ধ্বংসস্তূপে ছেয়ে যেতে দেখা যায়। ভবনের ভেতর থেকে তোলা ফুটেজে ধ্বসে পড়া ছাদ থেকে লোকজনকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। 

অসত্যভাবে প্রচারিত ভিডিওটির উপরের বাম কোণে “এসআরএইচইউহসপিটাল”  এবং নীচে বাম কোণে “এসআরএইচইউএইচ” লেখা ও লোগো দেখা যায়।  

Image
লাল ক্রস সংযুক্ত করে ১০ জুলাই ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

১৩ জুন ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে বোমা হামলা চালালে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই সংঘাত পুরো একটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সত্ত্বেও কোন পক্ষই দূরপাল্লার যুদ্ধ থেকে পিছু হটেনি।

২২ জুন তেহরানের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা “সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস” হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সাথে ইরান দ্রুত শান্তিচুক্তি না করলে ওয়াশিংটন আরও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর হুশিয়ারি দেন ট্রাম্প (আর্কাইভ লিংক)। 

একই ধরনের পোস্টে ফুটেজটি অন্যত্র ফেসবুকে এবং এক্সে ছড়ানো হয়েছে। 

দুই চিরশত্রুর মধ্যে সর্বশেষ রাতারাতি হামলায় ইরান ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কথা জানানোর পর ভিডিওটি ছড়াতে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

কিন্তু ভিডিওটি ইসরায়েলের নয়, লেবাননের হাসপাতালের। 

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওর কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ইনস্টাগ্রামে লেবাননের রাঘেব হারব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রকাশিত একই ফুটেজ পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

একটি দীর্ঘ ভিডিওর ক্লিপগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর হাসপাতালটির পুনরায় চালুর বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

ইনস্টাগ্রাম পেজের বায়োতে “এসআরএইচইউহসপিটাল”  এবং “এসআরএইচইউএইচ” লেখা দেখা যায়।

Image
এএফপি কর্তৃক হাইলাইট করা অসত্য ফেসুবক পোস্ট (বামে) এবং ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট

গুগল ম্যাপে হাসপাতালের ছবির সাথে অনলাইনে ছড়ানো ফুটেজের মিল পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
এএফপি কর্তৃক হাইলাইট করা অসত্য পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং গুগল ম্যাপে হাসপাতালের ছবির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং হাসপাতালের ফেসবুক পেজের একটি পোস্ট অনুসারে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে হাসপাতালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় (আর্কাইভ লিংক এখানে, এখানে এবং এখানে)। 

ওই সময় ইসরায়েলি বাহিনী এবং লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় পরিচালিত এক যুদ্ধবিরতিতে হিজবুল্লাহকে সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার ফলে ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধের অবসান ঘটে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল অনেকবার লেবাননে বোমা হামলা চালিয়েছে, যদিও হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ছড়ানো অন্যান্য অপতথ্য খণ্ডন করে এএফপি প্রতিবেদন করেছে এখানে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ