এআই দিয়ে বানানো "ক্ষতিগ্রস্ত তেল আবিবের” ভিডিওকে অসত্যভাবে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সাথে যুক্ত করে প্রচার

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনার ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে দেশটির কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরায়েল। জবাবে ইরান ১৪ জুন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে অসত্যভাবে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে সেগুলোকে ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত তেল আবিব এবং বেন গুরিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবস্থা বলে দাবি করা হয়। ক্লিপগুলো মূলত কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা দিয়ে কনটেন্ট প্রস্তুতকারী টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন।

১৫ জুন ২০২৫ তারিখে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত একটি কথিত বিমানবন্ধরের ভিডিও ফেসবুক পোস্ট করে বলা হয়, "ইসরাইলের শহর তেলআবিবের বর্তমান অবস্থা, পুরোপুরি ধ্বংস করে দিল ইরান। এই যুদ্ধ কিছুদিন অব্যাহত থাকলে গাজার মতই হবে ইনশাআল্লাহ”।

একই তারিখে প্রকাশিত আরেকটি ফেসবুক পোস্টে ইজরাইলের বেন গুরিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ধ্বংসাবশেষ উল্লেখ করে আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। 

"তেলআবিব এয়ারপোর্ট ইরানের মিসাইল হামলায় তছনছ করে দিয়েছে," ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়। 

এর একদিন আগে অন্য একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, “ইসরায়েলের লোগো সম্বলিত যুদ্ধবিমান গুলোর বর্তমান অবস্থা”।

Image
২৪ জুন ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্ট দুইটির স্ক্রিনশট

১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনার ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে দেশটির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করে এবং পাল্টা আক্রমণের জন্য ইরানকে উস্কে দেয়ার পর পোস্টগুলি সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)। 

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা লক্ষ্যে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে তেহরান। 

ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র সংঘাতে নিজেদের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী (আর্কাইভ লিংক)।

সংঘাতে নিজ দেশের অন্তত ২২৪ জন নিহত এবং ১,২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে ইসরায়েলে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং ৫৯২ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। 

একই ধরনের পোস্টে ফুটেজটি অন্যত্র ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে। 

ইসরায়েলের শহর ও নগরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করলেও, ভিডিওটি এসব হামলার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির নয়।   

এআই দিয়ে তৈরি

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওগুলোর কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা দিয়ে কনটেন্ট প্রস্তুতকারী একটি টিকটক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভিডিওগুলো পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে ওএখানে)। 

ভিডিওগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলেও এএফপিকে কোন জবাব দেননি ওই ব্যবহারকারী। 

ইসরায়েলের ক্ষতিগ্রস্ত যুদ্ধবিমান বিমানের দাবিতে কথিত ভিডিওটি ২২ মে ইনস্টাগ্রামে পোস্টা করা হয় (আর্কাইভ লিংক)

তেল আবিব বিমানবন্দর হিসেবে বিভ্রান্তিকর ক্লিপটি ২৭ মে পোস্ট করা হয়েছিল, যা ইসরায়েলের আকস্মিক বিমান হামলার আগের  (আর্কাইভ লিংক)।

ইসরায়েল তার আকাশসীমা বন্ধ করলেও, কিওয়ার্ড সার্চে তাদের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যুদ্ধের ফলে বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনপাওয়া যায়নি (আর্কাইভ লিংক)।

তেল আবিবের কাছে বিমানবন্দরের গুগল ম্যাপের চিত্রের সাথে অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির এক তুলনা লেআউট এবং আশেপাশের ল্যান্ডস্কেপের মধ্যে অমিল দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিও (বামে, মাঝে ) এবং গুগল স্ট্রিট ভিউ ইমেজারির (ডানে) মধ্যে তুলনামূলক স্ক্রিনশট।

তেল আবিবের বিভিন্ন ভবনের কথিত ক্ষতি দেখানো ভিডিওটি ১৪ জুন একই টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে "দক্ষিণ লেবানন" হ্যাশট্যাগ সহ শেয়ার করা হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ক্লিপ(বামে) এবং টিকটকে প্রকাশিত ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট

ভিডিওটির একটি নিবিড় বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের পাশ দিয়ে চলা যানবাহন এবং ধ্বংসস্তূপ একে অপরের উপর দিয়ে ধীরে ধীরে ঢুকে পড়তে এবং চলে যেতে দেখা যায়। 

Image
এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের অসঙ্গতি দেখিয়ে স্ক্রিনশট

যদিও জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হচ্ছে, তবুও দৃশ্যমান অসঙ্গতি রয়ে গেছে, যা ভুয়া চিত্র/ভিডিও সনাক্ত করার সর্বোত্তম উপায়। 

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ছড়ানো অন্যান্য অপতথ্য খণ্ডন করে এএফপি প্রতিবেদন করেছে এখানে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ