ট্রাম্পের 'পাকিস্তানকে হুমকি' দেওয়ার ভিডিওটি বিকৃত 

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর এক প্রাণঘাতী হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র রূপ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিকৃত ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে তাঁকে বলতে দেখা যায় যে ভারতের ওপর হামলা করলে তিনি "পাকিস্তানকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন”। প্রকৃতপক্ষে মূল ভিডিওটিতে ট্রাম্পকে ২০১৬ সালে মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। 

২ মে ২০২৫ তারিখে ফেসবুকে শেয়ার করা একটি ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, "পাকিস্তানকে মুছে ফেলো এবং চীনকে সতর্ক করো, ট্রাম্প ভারতকে সমর্থন করলেন"।  

ভিডিওটিতে ট্রাম্পকে একটি পোডিয়ামের পেছনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। যেখানে তিনি স্পষ্টতই বলেন, “আমি যুদ্ধ চাই না, আমি শান্তি চাই। কিন্তু পাকিস্তান যদি ভারতে হামলা করে, আমি ভারতকে সমর্থন করবো। পাকিস্তানকে নিশ্চিহ্ন করে দিবো এবং চীনকে সতর্ক করবো। আমি ভারতীয়দের ভালবাসি”।

২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ভারতীয় সীমান্তে পর্যটকদের ওপর এক প্রাণঘাতী হামলার পর থেকে বিতর্কিত কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান অস্থিতিশীলতার মধ্যেই ভিডিওটি অনলাইনে ছড়ানো হয়। পর্যটকদের ওপর হামলা ঘটনা দুই দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ(আর্কাইভ লিংক)। 

ভারত-শাসিত হিমালয় অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ওই হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দোষারোপ করছে নয়াদিল্লি। এ ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে একের পর এক উত্তপ্ত হুমকি এবং পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তৎপরতার সৃষ্টি  হয়েছে। 

তবে ভারতের তোলা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, ২৪ এপ্রিল থেকে কাশ্মীর সীমান্ত ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর রাতভর গুলি বিনিময় হয়েছে দুই পক্ষ।

Image
১৮ মে ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতকে এই হামলার জবাব এমনভাবে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে "তা বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে না যায়"।  

তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ঘিরে তৈরি উদ্বেগকে এর আগে কিছুটা খাটো করে দেখেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিরোধ "কোন না কোন ভাবে, সমাধান হয়ে যাবে"(আর্কাইভ লিংক)। 

ক্রমবর্ধমান সংঘাত সম্পর্কে ট্রাম্পের বক্তব্য হিসেবে একই ধরনের ক্লিপ ফেসবুক এখানেএখানে ছড়ানো হয়েছে। 

কিন্তু ভিডিওটি বিকৃতভাবে বানানো হয়েছে। 

গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ পাওয়া যায়। যা ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে সরকারি কার্যক্রম প্রকাশকারী মার্কিন পাবলিক সার্ভিস টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সি-স্প্যান প্রকাশ করেছিল(আর্কাইভ লিংক)। 

ভিডিওটির বিবরণে বলা হয়, "নিউ ইয়র্কের ইকোনমিক ক্লাবে বক্তব্য দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন এবং তাঁর রানিং মেট গভর্নর মাইক পেন্স তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন”।  

সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্প আমেরিকাকে অর্থনৈতিক কেন্দ্র করে তোলার এবং আড়াই কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ভারত বা পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করেননি।

Image
অসত্য পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং সি-স্প্যানের ভিডিওটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সিএনবিসি এবং সিএনএন একই ধরণের ফুটেজ প্রকাশ করেছে (আর্কাইভ এখানে এখানে)

ভিডিওতে ট্রাম্পের থুতনি এবং ঘাড় অস্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে দেখা যায়, যা ভিডিওটিকে এআই-দিয়ে বিকৃত করে তৈরির ইঙ্গিত দেয়। জেনারেটিভ এআই-তে অসাধারণ অগ্রগতি সত্ত্বেও, এখনও এআই-জেনারেটেড কন্টেন্টে ত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে। 

বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি সর্বশেষ ভোকোডার এবং লিপ-সিঙ্ক সনাক্তকরণ মডেল ভিডিওটিকে বিকৃত বলে চিহ্নিত করেছে।

পেহেলগাম হামলা নিয়ে এএফপি অন্যান্য অসত্য দাবি খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছে এখানে, এখানেএখানে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ