কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবিকে ভারতে উৎসবের সময় 'মুসলিম জঙ্গি গ্রেফতারের' অসত্য দাবিতে প্রচার

হিন্দুদের মহাউৎসব কুম্ভ মেলায় হামলার চেষ্টার সময় হিন্দু সন্ন্যাসীর বেশধারী এক মুসলিম ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতারের বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো গুজব নাকচ করেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পুলিশ। অসত্য দাবি ছড়ানো ফেসবুক পোস্টের ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি।

২২ জানুয়ারি ২০২৫ একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "কুম্ভমেলায় সাধুর পোশাকে #জ_ঙ্গি(?)গ্রেফতার। নাম- আয়ুব খান"।

পোস্টটিতে আরও বলা হয়, "সাধুর ভেক ধরলে কি হবে,, যদি সাধু না হয় তাহলে তার চলাফেরা,কথাবার্তা, ওঠা বসা... এসব দেখে সন্ন্যাসীরা চট করে ধরে ফেলতে পারে। তাই নাগা সন্ন্যাসীদের সন্দেহ হওয়ায় গোপন পরিচয় ( সন্ন্যাসীদের কিছু গোপন কোড ল্যাঙ্গুয়েজ থাকে,,, যেটা শুধু সন্ন্যাসীরাই জানে) জিজ্ঞাসা করায় সে ঘাবড়ে যায়। তখনই নাগা সন্ন্যাসীরা ভালো করে খাতির যত্ন করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।"

পোস্টটিতে যুক্তি ছবিতে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাঁটু সমান পানিতে হিন্দু গেরুয়া পোশাক পরিহিত হাত বাধাঁ এক ব্যক্তিকে ধরে থাকতে দেখা যায়।

Image
২৯ জানুয়ারি ২০২৫ এ নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ নদীর তীরে ছয় দিনব্যাপী হিন্দু মহা উৎসব কুম্ভ মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে ৪০ কোটি পুণ্যার্থী যোগ দেয়ার করা রয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

হাজার বছরের পুরনো ধর্মানুরাগ এবং ধর্মীয় স্নানের প্রস্তুতির মাত্রাটি শুরু থেকে একটি দেশ গড়ে তোলার মতো জানিয়েছেন আয়োজকরা।

একজন ডাক্তার এএফপিকে জানিয়েছেন যে, ভিড় সনাক্ত করার জন্য আয়োজকরা শত শত ক্যামেরা স্থাপন এবং ড্রোন ব্যবহার করা সত্ত্বেও ২৯ জানুয়ারি প্রবল ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ১৫ নিহত হয়েছেন।

একই দাবিতে ছবিটি বাংলা ভাষায় ফেসবুকে এখানে, হিন্দীতে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বানানো ছবি

উত্তর প্রদেশের স্থানীয় পুলিশের কাছে এএফপি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ প্রচারিত পোস্টগুলোর দাবিকে নাকচ করেছে।

মেলার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োজিত আখাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ভাস্কর মিশ্র ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে এএফপিকে জানিয়েছেন যে, আইয়ুব খান নামে কোনো মুসলিম ব্যক্তি সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে এসে কুম্ভ মেলায় গ্রেফতার হননি।

তিনি আরও জানান যে, আইয়ুব আলী নামে একজনকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মিশ্র বলেন, "প্রয়োজনীয় সব তদন্তের পরে ম্যাজিস্ট্রেট আইয়ুবকে ছেড়ে দিয়েছেন এবং এ ঘটনায় কোন মামলা করা হয়নি।"

স্থানীয় মিডিয়া ইটিভি ভারত গত ১৪ জানুয়ারী জানিয়েছে, আইয়ুব হিন্দু পরিচয় দিয়ে এক হিন্দু সন্ন্যাসীর ক্যাম্প সাইটে প্রবেশ করেছিলেন (আর্কাইভ লিংক)।

ইটিভি ভারতের প্রতিবেদনে প্রকাশিত আইয়ুবের ছবির সাথে অসত্য পোস্টগুলোতে শেয়ার করা ছবির কোনো মিল নেই।

ভারতীয় টেক লার্নিং ফার্ম দ্য ইন্ডিয়ান ডিপফেকারের দিব্যেন্দ্র সিং জাদাউন এএফপিকে বলেন যে তিনি ছবিটি বিশ্লেষণ করেছেন এবং এতে ভিজ্যুয়াল ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন যাতে বোঝা যায় ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দ্বারা তৈরি।

জাদাউন গত ২৩ জানুয়ারি বলেন, "ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের কোন মুখায়বব নেই। এছাড়া জাফরান রংয়ের পোশাক পরা লোকটিকে যে দড়ি দিয়ে বাঁধা সেটিও দেখতে  খুবই পরিষ্কার এবং নকল দেখায়।"

তিনি আরো বলেন, "ছবিটিতে উপস্থিত মানুষের চারপাশের পানিতে ঢেউয়ের পরিমাণ নাই বললেই চলে যা বাস্তবসম্মত নয়।"

এএফপি আলাদাভাবে ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে ছবিটিতে সন্ন্যাসী এবং বাম দিকের পুলিশ অফিসারের হাতগুলো অস্বাভাবিক আকৃতির।

Image
মুখায়ববহীন মানুষ, অস্বাভাবিক হাত এবং অপেক্ষাকৃত কম ঢেউকে মার্ক করে নেয়া স্ক্রিনশট

যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দ্বারা নির্মিত মিডিয়া সনাক্ত করার জন্য কোনও নির্ভুল পদ্ধতি নেই তবে ভিজ্যুয়াল অসঙ্গতিগুলি এক্ষেত্রে সত্যাসত্য সনাক্ত করতে সাহায্য করে। কারণ জেনারেটিভ এআইতে (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দ্রুত অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনও কিছু অসঙ্গতি থেকে যায়।

এএফপি এর আগে কুম্ভ মেলাকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর তথ্য খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছিল।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ

সম্পর্কিত নিবন্ধ