আদালত প্রাঙ্গণে সহিংসতায় নিহত মুসলিম আইনজীবী গ্রেফতারকৃত হিন্দু সন্যাসীর আইনি দলের সদস্য ছিলেন না

বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ডাক তোলা গ্রেফতারকৃত একজন হিন্দু সন্যাসীর সমর্থকরা নভেম্বরে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একটি আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়, যে সহিংসতায় একজন মুসলিম সরকারী আইনজীবী নিহত হন। ওই নিহত আইনজীবী হিন্দু সন্যাসীর পক্ষের আইনজীবী ছিলেন বলে প্রতিবেশী হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের গণমাধ্যমে যে দাবি বারবার ছড়ানো হয়েছে তা অস্কীকার করেছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত আদালতের একটি নথিতে দেখা যায় একজন ভিন্ন আইনজীবী মামলাটি নিয়ে লড়ছিলেন।

২৭ নভেম্বর ২০২৪ শেয়ার করা একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, "চিন্ময় প্রভুর স্বপক্ষ্যের আইনজীবীকে ইতিমধ্যেই হত্যা করা হয়েছে । বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হতে চলছে বাংলাদেশের সনাতনীরা।"

পোস্টে ভারতের রিপাবলিক বাংলার একটি প্রতিবেদন যুক্ত করা দেয়া হয় । অন্য একটি প্রতিবেদনে সম্প্রচার মাধ্যমটি একই ধরনের দাবি করেছে, যদিও পরে প্রতিবেদনটি সংশোধন করা হয়েছে।

Image
গত ৬ জানুয়ারি ২০২৫ এ নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থান দীর্ঘ সময়ের স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে পালাতে বাধ্য করার পর বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্পর্ক অশান্ত হতে শুরু করে (আর্কাইভ লিংক)।

একটি সমাবেশে জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ে গ্রেফতারকৃত প্রতিবাদী হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ হওয়ার পর নভেম্বরে তার ক্ষুব্ধ সমর্থকরা চট্টগ্রামে পুলিশের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়।

চিন্ময় বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার চেয়ে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়া নব গঠিত হিন্দু সংগঠনের মুখপাত্র। এর আগে তিনি হরে কৃষ্ণ আন্দোলন খ্যাত ইস্কনের একজন সদস্য ছিলেন।

তবে পুলিশ জানিয়েছে যে, আদালত প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন, যিনি মুসলিম ছিলেন।

একই দাবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকএক্স-এ দাবিটি ছড়ানো হয়েছে।

আলিফ চিন্ময় ব্রহ্মচারীর পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এমন তথ্য ফার্স্টপোস্ট, ইকনোমিক টাইমস এবং এশিয়ানেট নিউজসহ অন্যান্য ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

ভিন্ন আইনজীবী

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট নাজিম উদ্দীন চৌধুরীর মতে, দাবিগুলো অসত্য।

গত ১১ ডিসেম্বর তিনি এএফপিকে বলেন, "নিহত আইনজীবী চিন্ময় দাসের পক্ষেও ছিলেন না, সরকার পক্ষেও ছিলেন না। আদালতের কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে তাকে বিক্ষুব্ধ দলটি তাকে হত্যা করে"।

তিনি বলেন, "হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী  ১১জনকে গ্রেফতার করেছে।"

২৭ নভেম্বর ফেসবুকে শেয়ার করা একটি বিবৃতিতে নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দাবিগুলোকে "অসত্য" বলে সাব্যস্ত করেন (আর্কাইভ লিংক)

বিবৃতিতে বলা হয়, "আজ চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে খুন হওয়া সাইফুল ইসলাম আলিফকে চিন্ময় দাসের প্রতিনিধি হিসেবে কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে। তবে দাবিটি অসত্য এবং অসৎ উদ্দেশ্যে এটি ছড়ানো হচ্ছে।"

সুভাশীষ শর্মা নামে এক আইনজীবী ব্রহ্মচারীর প্রতিনিধিত্ব করেছেন বলে এতে দাবি করা হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গণমাধ্যম বিভাগ থেকে ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদনের একটি কপিও সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়, যেখানে সুভাশীস শর্মার নাম বিদ্যমান। কিন্তু নথির কোথাও আলিফের নাম দেখা যায়নি। 

নিচে শর্মার নামের সাথে একটি স্ট্যাম্পসহ নথিটির স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
ওকালতনামার অফিসিয়াল কপি

আলিফের হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা দি ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোসহ বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি হিন্দু সন্যাসীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করতে দেখা যায়নি (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা ঘিরে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্য খণ্ডন করে এএফপি একাধিকপ্রতিবেদন করেছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ