সৌদি আরবে প্রথম তুষারপাতের অসত্য দাবিতে ছবি ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে

২০২৪ সালের নভেম্বরের শুরুতে সৌদি আরবের আল-জাওফ অঞ্চলে প্রথমবারের মতো তুষারপাত হলেও সেটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক দেশটিতে "ইতিহাসে প্রথম" তুষারপাতের ঘটনা নয়, যদিও অনলাইনে বারবার ছড়ানো পোস্টে তার উল্টো দাবি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনে সৌদি আরবের অন্যান্য অঞ্চলে মাঝে মাঝে তুষারপাতের খবর পাওয়া যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এটি আরো বেশি ঘটতে যাচ্ছে বলে শতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। অসত্য দাবির সাথে ছড়ানো একটি ছবি ২০২০ সালের একটি পুরনো পোস্ট থেকে নেয়া। অন্য ছবিটি আল-জাওফ অঞ্চল থেকে কয়েক'শ কিলোমিটির দূর ভিন্ন জায়গায় ধারণ করা।

৮ নভেম্বর ২০২৪ শেয়ার করা একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "সৌদি আরবের মরুভূমি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তুষারপাত দেখেছে। প্রবল বৃষ্টি আর সেই সঙ্গে শিলাবৃষ্টির ফলে সৌদি আরবের আল-জাওফ অঞ্চলের কিছু অংশ তুষারাবৃত প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। এর ফলে যেন আশ্চর্যভূমিতে পরিণত হয়েছে এই অঞ্চল। ইতিহাস বলছে, এর আগে কখনও এই অঞ্চলে তুষারপাত হয়নি। এই প্রথম এই অঞ্চলে তুষারপাত দেখলেন বাসিন্দারা!" 

পোস্টে ছড়ানো দুটি ছবির একটিতে শুভ্র চাদরে আচ্ছাদিত মরুভূমি এবং অন্যটিতে উটের কুঁজের উপর তুষারের স্তুত জমতে দেখা যায়।

Image
অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

আল-জাওফ অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে "ব্যাপক শিলসহ" ভারী বৃষ্টিপাত নিয়ে ২ নভেম্বর ২০২৪ রাষ্ট্র পরিচালিত সৌদি প্রেস এজেন্সি প্রতিবেদন প্রকাশের পর অসত্য দাবিটি অনলাইনে ছড়াতে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

আল-জাওফ অঞ্চলে ঐতিহাসিক তুষারপাত নিয়ে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও প্রতিবেদন করেছে (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

ফেসবুকে অন্যত্র একই ধরনের দাবি করা হয়েছে।

তবে অসত্য পোস্টটি ছড়ানোর আগেও সৌদি আরবে তুষারপাতের নানা প্রতিবেদন পাওয়া যায় এবং পোস্টের ছবিগুলোর সাথে আল-জাওফ অঞ্চলে তুষারপাতের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

অপ্রাসঙ্গিক ছবি

রিভার্স ইমেজ সার্চে প্রথম ছবির দৃশ্যের অনুরূপ একটি ছবি পাওয়া যায়, যা অসত্য দাবিটি ছড়ানোর কয়েকদিন আগে ৩  নভেম্বর ২০২৪ একটি এক্স একাউন্টে আপলোড হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, "হাইল-রাফা সড়কের স্নাপশটস"।

ছবিটি আল-জাওফ থেকে ২৯০ কিলোমিটার দূরে হাইল অঞ্চল থেকে তোলা হয়েছিল বলে ছবিটির ধারণকারী স্থানীয় সরকারী কর্মচারী হামাদ আল সালুম এএফপি-কে জানিয়েছেন।

অঞ্চলটির গুগল স্যাটেলাইটের ছবিতেও ওই এলাকায় রাস্তার উভয় পাশে একই ধরনে ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে অসত্য পোস্টের ছবি (বামে) এবং সালুমের এক্স একাউন্টের ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টের ছবি (বামে) এবং সালুমের এক্স একাউন্টের ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

অন্য একটি রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে অসত্য পোস্টটি ছড়নোর কয়েক বছর  আগে দ্বিতীয় ছবিটি ২০২০ সালের অক্টোবরে একটি ব্লগিং সাইটে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

সৌদি আরবের নানা দৃশ্য প্রকাশকারী থুনয়ান নামের একটি ব্লগে ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল।

নিচে অসত্য পোস্টে শেয়ার হওয়া ছবিটি (বামে) এবং ব্লগের ছবিটির (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টে শেয়ার হওয়া ছবিটি (বামে) এবং ব্লগের ছবিটির (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট

অসত্য দাবিটি ছড়ানোর আগে সৌদি আরবে তুষারপাতের বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

সরকার পরিচালিত সৌদিপিডিয়া ওয়েবসাইটের মতে, সাধারণত শীত মৌসুমে রাজতান্ত্রিক দেশটিতে, বিশেষ করে তাবুকসহ উত্তরাঞ্চলগুলোতে তুষারপাত দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

তাবু টানিয়ে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পিকনিকসহ অঞ্চলটিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের তুষারময় আবহাওয়া উপভোগের বিষয়ে এএফপি ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে (আর্কাইভ লিংক)।

২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারিতে এএফপির সাথে আলাপকালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও নীতি বিভাগের প্রধান ওমর বাদ্দুর বলেন, সৌদি আরবে তুষারপাত জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।

বাদ্দুর বলেন, "বিশ্বব্যাপী চরম নিম্ন তাপমাত্রার ঘটনা কদাচিৎ হলেও ঘটছে এবং আগামীতেও হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে উষ্ণ মহাসাগর আরও বেশি বাষ্প  ও বায়ুমণ্ডলে আরও আর্দ্রতার তৈরি করে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন এই ধরনের ঘটনা না হওয়ার চেয়ে বেশি হওয়ার পক্ষে ভূমিকা পালন করবে।"

এর আগে বিভিন্ন বছর রাজতান্ত্রিক দেশটিতে তুষারপাত নিয়ে অন্য গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ