পডকাস্টে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ কিংবা দেশটির নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেননি ট্রাম্প

একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে উৎখাতের কয়েক মাস পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একাধিক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে পদত্যাগ না করার কারণে শেখ হাসিনাকে 'এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী' বলেছেন বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখননি বলে স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দেয়া একটি বক্তব্যের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগকে বেআইনি হিসেবে তুলে ধরার একটি প্রয়াস দেখা দেয়। তবে ট্রাম্পের পডকাস্ট সাক্ষাৎকার পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে তিনি বাংলাদেশ কিংবা দেশটির নেতৃত্ব বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।

৯ নভেম্বর ২০২৪ ফেসবুকে ছড়ানো একটি পোস্টের ক্যাপশনের একটি অংশে বলা হয়, "আমি মনে করি শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: পিবিডি ব্রডকাস্টকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প।"

এসময় তিনি বাংলাদেশের অবৈধ দখলদার সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন-যারা বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, তারা আমাকে পদত্যাগ পত্রটি দেখান।"

ফেসবুকের ওই পোস্টে পিবিডি পডকাস্টের উপস্থাপক প্যাট্রিক বেট-ডেভিডের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারের মধ্যখানে আলাপরত একটি ছবি জুড়ে দেওয়া হয়। ছবির নিচে বাংলায় বলা হয়, 'আমি মানি হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: ট্রাম্প'।

Image
২০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

একই ধরনের দাবি ফেসবুকে অন্যত্র এখানে এখানে ছড়ানো হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখেননি, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে এমন বক্তব্য দেয়ার পরই শেখ হাসিনাকে নিয়ে ট্রাম্পের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসত্য দাবিটি ছড়ায়। রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্য হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টিকে বেআইনি হিসেবে তুলে ধরার একটি সম্ভাবনার জন্ম দেয় (আর্কাইভ লিংক)।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। সেদিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে দেশবাসীর সামনে ঘোষণা দেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি দেখেননি, রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের অনুগত বলে অভিযোগ তুলে মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভকারীরা।

তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পিবিডি পডকাস্টে তার সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ, দেশটির নেতৃত্ব অথবা হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।

ট্রাম্পের নির্বাচন-পূর্ব সাক্ষাৎকার

ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারটি ১৭ অক্টোবর পিবিডি পডকাস্ট নামের একটি ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প গেটস ইমোশোনাল-স্পিকস অন ট্যারিফস, ওবামা অ্যান্ড ইরান'।

নিচে অসত্য পোস্টে ব্যবহৃত ছবির (বামে) এবং সাক্ষাৎকারটির ১২ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের দৃশ্য থেকে একটি স্থির চিত্রের (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টে ব্যবহৃত ছবির (বামে) এবং সাক্ষাৎকারটির ১২ মিনিট ৩৪সেকেন্ডের দৃশ্য থেকে একটি স্থির চিত্রের (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

১ ঘণ্টা ২৬ মিনিটের ওই ভিডিওতে শেখ হাসিনা বা বাংলাদেশ নিয়ে একটি কথাও বলেননি ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল এবিসি নিউজ, সেখানেও বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের কথা বলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি (আর্কাইভ লিংক)।

তবে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কয়েক দিন আগে ৩১ অক্টোবর নিজের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন ট্রাম্প। সেখানে ট্রাম্প বলেন, 'বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর যে বর্বরোচিত সহিংসতা, হামলা এবং লুটতরাজ চালানো হচ্ছে আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে' (আর্কাইভ লিংক)।

তবে তার পোস্টে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প।

এর আগেও ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ছড়ানো দাবিকে খণ্ডন করে এখানে এখানে প্রতিবেদন করেছে এএফপি।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ