এটি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ভারত সফরের পুরনো ভিডিও, ‘দেশে ফেরার দৃশ্য‘ নয়

বাংলাদেশের একটি আদালতে নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কয়েক সপ্তাহ পর বিমান থেকে শেখ হাসিনার বেরিয়ে আসার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে শেয়ার করে সেটিকে তার দেশে ফেরার ভিডিও বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ২১ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত আর বাংলাদেশে ফিরে আসে নাই। তবে অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটি ক্ষমতাচ্যুতির আগে গত জুন মাসে অফিসিয়াল সফরে শেখ হাসিনার ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পৌঁছানোর।

৬ নভেম্বর ২০২৪ শেয়ার করা একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, "ট্রাম্প জেতায় বাংলাদেশে ল্যান্ড করেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।"

হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয় উপাধি ব্যবহার করা ক্যাপশনে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস এবং ক্ষমতায় থাকাকালীন তার বিরোধীতাকারী বিশিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, "পালাতে দেয়া হবে না"।

ভারতের সংবাদ সংস্থা দি প্রিন্ট এবং এএনআই-র লোগ সংবলিত ভিডিওটিতে বিমান থেকে অবতরণের পর কিছু কর্মকর্তাকে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়। ভিডিওটির ওপর ২০১৬ সালে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ্যকসেপ্টটেন্স স্পীচের অডিও বাজানো হয় (আর্কাইভড লিংক)।

২০২৪ -এ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সুস্পষ্ট বিজয়ের পর ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

Image
২০ নভেম্বর ২০২৪ এ নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

এর আগে হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের নিষ্ঠুর শাসনের সমাপ্তি ঘটানো শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন প্রাণঘাতী বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার ইন্ধন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর রাজনৈতিক দল। তবে হোয়াইট হাউজ দাবিকে "সরল মিথ্যা" বলে মন্তব্য করেছে (আর্কাইভ লিংক)।

একই ধরনের দাবিতে ভিডিওটি অন্যত্র ফেসবুকে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের নের্তৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর প্রতিবেশি দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়া ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একটি আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পোস্টটি ছড়ানো হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গণআটক এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার অস্থিতিশীল সময়ে পুলিশের চালানো হত্যাকাণ্ডে ৭০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তার কয়েক ডজন সহযোগীকে জেল হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে এএফপির একজন সাংবাদিকের তথ্য মতে, পালানোর পর শেখ হাসিনা আর দেশে ফিরেননি।

বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপিত  ভিডিও

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির কীফ্রেম ব্যবহার করে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে ২০২৪ সালের ২১ জুন দি প্রিন্ট এবং এএনআই-র ইউটিউবে প্রকাশিত একটি দীর্ঘ এবং উচ্চমানের ফুটেজ পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

তখনকার প্রধানমন্ত্রী হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত পৌঁছলে ভিডিওটি ধারণ করা হয় বলে এসব সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং তাকে নয়া দিল্লির বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। ভিডিওতে তাঁকে বিমানের সিঁড়ির নিচের দিকে দাঁড়িয়ে  হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়।

নিচে অসত্য পোস্টে ব্যবহৃত ভিডিও (বামে) এবং দি প্রিন্টের পোস্ট করা ভিডিওটির (ডানে) সিংকে এএফপি কর্তৃক হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টে ব্যবহৃত ভিডিও (বামে) এবং দি প্রিন্টের পোস্ট করা ভিডিওটির (ডানে)  তুলনামূলক স্ক্রিনশট

২০২৪ সালের ২১ জুন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও হাসিনার দিল্লি পৌঁছানোর একটি ছবি পোস্ট করেছিল (আর্কাইভ এখানে)।

বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা ঘিরে ছড়ানো অসত্য দাবি খণ্ডন করে এএফপি এর আগেও প্রতিবেদন করেছে এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ