সৌদি ব্লগারের সাথে নেতানিয়াহুর রসিকতার পুরনো ভিডিওকে ইসরায়েল হামাস যুদ্ধের সাথে যুক্ত করে প্রচার

ইসরায়েলি হামলায় যখন গাজা উপত্যকা ও লেবানন চূর্ণবিচূর্ণ, তখন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়িয়ে সেটিকে ফিলিস্তিন, লেবানন ও ইয়েমেনে মুসলমানদের হত্যা করার জন্য তাকে একজন সৌদি নাগরিকের অভিনন্দন জানানোর ভিডিও বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে। তবে, প্রকৃত ক্লিপটি একজন সৌদি ব্লগারের সাথে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কথোপথনের যেখানে ওই ব্লগার ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহুকে শুভ কামনা জানান।

গত ২০ অক্টোবর ২০২৪ একটি ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, এবং ইয়েমেনে মুসলমানদের হত্যা করছে, আর এই নির্লজ্জ সৌদিয়ান নেতানিয়াহুকে ভিডিও কল করছে এবং তার প্রশংসা করছে। লজ্জা তোমাদের, সৌদি আরব এবং আরব জনগণ।"

পোস্টে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আরব কেফিয়া পরা একজন ব্যক্তির সাথে কথা বলার ভিডিও দেখা যায়।

Image
গত ৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টটির স্ক্রিনশট

অনুরূপ পোস্টে ভিডিওটি ফেসবুকে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এক বছর ধরে আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষের পর ইরান সমর্থিত গ্রুপটিকে পিছু হটানোর জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর হিজবুল্লাহকে "টার্গেট" করে লেবাননে ঢুকে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল (আর্কাইভ লিংক)।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভিত্তিতে এএফপির করা তালিকা অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধ এই অভিযানে ইসরায়েলের ব্যাপক বোমা হামলায় ১,৭০০ জনের বেশি নিহত হন। তবে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের মিলিট্যান্ট গ্রুপের আক্রমণের পর থেকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের অফিসিয়াল তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির তালিকা অনুযায়ী, বন্দিদশায় প্রাণ হারানো জিম্মিসহ হামাসের ওই হামলায় ইসরায়েলের ১২০৬ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগ বেসামরিক নাগরিক।

ওই দিন অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া ২৫১ জনের মধ্যে ৯৭ জন এখনো গাজায় আটক রয়েছে এবং ৩৪ জনকে মৃত ঘোষণা করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।

হামাস পরিচালিত ওই ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা সামরিক অভিযানে ৪৩,০০০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, তাদের বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘ নিহতদের এই সংখ্যাকে বিশ্বাস যোগ্য বলে মনে অভিমত দিয়েছে।

হামাস এবং হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের "প্রতিরোধের জোটের" অংশ।

সৌদি ব্লগার

ভিডিওটির উপরের দিকে ডান কোনায় তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম টিআরটির লোগো খুঁজে পাওয়া যায়।

টিআরটির ইউটিউব চ্যানেলে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ইসরায়েল- হামাস যুদ্ধ শুরু কয়েক বছর আগে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

ইউটিউব ভিডিওটির আরবি শিরোনামে বলা হয়, "সৌদি ব্লগার মোহাম্মেদ সাউদের সাথে নেতানিয়াহুর কল।"

নিচে অসত্য পোস্টে শেয়ার করা ক্লিপ (বামে) এবং টিআরটির ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টে শেয়ার করা ক্লিপ (বামে) এবং টিআরটির ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

২০২০ সালের ২ মার্চ ইসরায়েলের আইনসভার নির্বাচনের আগে ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ব্লগার এবং ইসরায়েলের সোচ্চার সমর্থক মোহাম্মেদ সাউদের সাথে ফেসটাইমে কল করেন নেতানিয়াহু।

মিডেল ইস্ট আই-র প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ইসরায়েলের প্রধামন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়ে তার প্রচারণার সফলতার আশা প্রকাশ করেন (আর্কাইভ লিংক)।

টিআরটির ইউটিউব ভিডিওটির মতে, ব্লগার "একটি চমৎকার লিকুডনিক" হবেন, নেতানিয়াহুর এমন রসিকতা অনলাইনে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে।

এর আগে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে আরব উপদ্বীপ, মিশর এবং ইরাকের কুর্দিস্তানের সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল ইসরায়েল সফর করেন, সেই দলে সৌদি ব্লগারও ছিলেন (আর্কাইভ লিংক)।

সফরকালে  ফিলিস্তিনিরা তাকে 'বিশ্বাসঘাতক' এবং 'জায়নবাদী' হিসেবে অভিযুক্ত করে জেরুজালেমের পুরাতন শহর থেকে তাড়া করার সময় তার ছবি ধারণ করা হয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ঘিরে ছড়ানো নানা বিভ্রান্তির তথ্য খণ্ডন করে এএফপির আরো প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ