বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ‘হস্তান্তর করেনি‘: সরকারি কর্মকর্তারা

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন চতুর্থ মাস শুরু করেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ 'হস্তান্তরের' আলোচনাকালে সিনিয়র সামরিক অফিসারদের ধারণ করা ছবি হিসেবে অনলাইনে ছড়ানো একটি বিভ্রান্তিকর দাবিকে অসত্য সব্যস্ত করেছেন দেশটির কর্তকর্তারা। দুই দেশের মুখপাত্রদের মতে, অনলাইন পোস্টের ছবিটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নিয়মিত বিষয় নিয়ে সামরিক প্রতিনিধিদের বৈঠকের। দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে ১১ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত কোন অফিসিয়াল রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

১ লা নভেম্বর ২০২৪ ফেসবুকে ছড়ানো একটি ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, "সেন্টমার্টিন হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হলো! হায়রে অভাগা জাতি বুঝবি একটি শেখের বেটির জন্য কাঁদবি!"

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক একজন নেতা পোস্টটি শেয়ার করেছেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে (আর্কাইভ এখানে)।

Image
গত ৬ নভেম্বর নেয়া স্ক্রিনশট

একই ধরনের বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছবিটি ফেসবুকে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

দ্বীপটিতে সামরিক ঘাঁটি বানানোর জন্য ঢাকাকে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে হাসিনা ও তার দলের নেতারা ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করলে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করেন (আর্কাইভ এখানে)।

এরপর হাসিনা বলেছেন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে কারণ দেশটি এই দ্বীপকে করায়ত্ত্ব করতে চায়। তবে এই দাবিটি হোয়াইটহাউজ অস্বীকার করেছে (আর্কাইভ এখানে)।

চলতি নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ সরকার আবারো পৃথক পৃথকভাবে এসব পোস্টের দাবিকে অসত্য বলে সব্যস্ত করেছেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, "এটা একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার। সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং কোন দেশের কাছে লিজ দেয়ার জন্য নয়।"

তিনি বলেন, "সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকটি ছিল রুটিন প্রোগ্রামের অংশ এবং বিগত বছরগুলোতে এরকম আরো সাতটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।"

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত প্রেস অফিসার আশা বেহ বলেন, "এসব দাবি পুরোপুরি অসত্য।"

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়ার বিষয়ে ১১ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত কোন অফিসিয়াল রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

'রুটিন বৈঠক"

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অক্টোবরের শেষ দিকে রাজধানী ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাথে নিয়মিত ল্যান্ড ফোর্সেস টকসের (এলএফটি) সময় ছবিটি ধারণ করা হয়েছিল।

গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর ওয়েবসাইটে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায় (আর্কাইভ এখানে)।

ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, "বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ৮ম LAND FORCES TALKS (LFT)-২০২৪ এর সফল সমাপ্তি।"

Image
বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত ছবি (বামে) এবং আইএসপিআর এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ছবির তুলনামূলক স্ক্রিনশট

এতে আরো বলা হয়, " ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ৩০ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ৮ম Land Forces Talks (LFT) ২০২৪ আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর ২০২৪) সমাপ্তি হয়েছে।"

"এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উভয় দেশের সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।"

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছবিটি যুক্ত করে ক্যাপশনে বলা হয়, "৮ম LAND FORCES TALKS -২০২৪ এ অংশগ্রহণকারী দুই দেশের পক্ষে স্বাক্ষর করছেন ইউএস প্রতিনিধিদলের প্রধান মেজর জেনারেল স্কট এ. উইন্টার এবং ব্রিগেঃ জেনারেল হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।" 

'চীফ এডভাইজার প্রেস উইং ফ্যাক্টস' নামে ফেসবুক পোস্টে ২ নভেম্বর বিষয়টি খোলাসা করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংলাপটি দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত আয়োজনের অংশ ছিল। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ "হস্তান্তর বিষয়ক বৈঠক" ছিল না।

"বহু বছর ধরে বাংলাদেশ আর্মি এবং ইউএস আর্মি প্যাসিফিকের মধ্যে ল্যান্ড ফোর্সেস টকস চলে আসছে। ৭তম ল্যান্ড ফোর্সেস টকস অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৪-১৬ আগস্ট হাওয়াই এর ফোর্ট শাফটারে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সাথে এই সংলাপকে সম্পৃক্ত করে যে কোন পোস্টই গুজব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহুবার এটি স্পষ্ট করেছে যে কোন উদ্দেশ্যেই দ্বীপটি কোন বিদেশী দেশের কাছে ইজারা দেওয়ার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই।"

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ