ভারতের আসাম পুলিশের ভিডিও, 'বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসীদের ঘুরাঘুরি'র নয়

  • নিবন্ধটি এক বছরেরও বেশি পুরনো।
  • প্রকাশিত 10 নভেম্বর 2024, 14:12
  • 2 এক্স মিনিটে পড়ুন
  • লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের দূর্গম সীমান্ত এলাকায় একটি জাতিগত সহিংসতা দেখা দেয়ার পর সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে একটি ভিডিও ছড়িয়ে সেটিকে একটি সশস্ত্র উপজাতি দলের টহলের ভিডিও বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে। চট্টগ্রামের দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সংঘাতের কয়েক মাস আগেই একই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে জুলাইয়ে ভিডিওটি প্রকাশকারী ওই ব্যক্তি এএফপিকে জানিয়েছেন যে, ভিডিওটি ভারতে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের কার্বি অ্যাংলং-এ ধারণ করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, "পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তির আসল চিত্র এটি। বাঙালিদের হত্যাসহ জিম্মি করে চাঁদাবাজি এটি তাদের নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার।"

Image
৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

"পার্বত্য অঞ্চলে বাঙ্গালিরা অস্ত্রে মুখে ভয়ের সাথে জীবনযাপন করছে। এসব অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।"

চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে সম্প্রতি সহিংসতা সৃষ্টির পর ওই অঞ্চলে এক দল সশস্ত্র লোকের ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির আগে ওই এলাকায় কয়েক যুগ ধরে উপজাতীয় ভূমির জন্য যুদ্ধ করে আসছে বিদ্রোহী গ্রুপ (আর্কাইভ লিংক)।

শান্তি চুক্তি এবং ওই অঞ্চল থেকে অধিকাংশ সৈন্য প্রত্যাহার সত্ত্বেও স্যাটেলারস গ্রাম এবং সেনাবাহিনীর ক্যাম্প উচ্ছেদসহ উপজাতিদের পক্ষ থেকে চুক্তির মূলধারা বাস্তবায়নের দাবিতে অঞ্চলটিতে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোটরসাইকেল চুরির সময় বাংলাভাষী একজন ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে।

প্রতিবাদে উপজাতি সম্প্রদায়ের দোকানপাট এবং অবকাঠামোতে হামলা ও আগুন দেয়া হয়।

২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, উপজাতি একটি গ্রুপের সদস্য কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পর সেনাবাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং কর্তৃপক্ষ ভাষ্য মতে এতে চারজন নিহত হয়েছেন।

ভিডিওটি একই দাবিতে ফেসবুকে অন্যত্র এখানে এখানে ছড়ানো হয়েছে।

তবে ক্লিপটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সম্প্রতিক ঘটে যাওয়া জাতিগত সংঘাতের পূর্বের।

আসাম পুলিশের টহল

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিও থেকে নেয়া কীফ্রেম দিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের কার্বি অ্যাংলং জেলা ভিত্তিক একজন ফেসবুক ইউজারের ১৭ জুলাইয়ে আপলোড করা একটি হাই-কোয়ালিটি ফুটেজ পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে অসত্যভাবে শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং জুলাই ১৭ তারিখে পোস্ট করা ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্যভাবে শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং জুলাই ১৭ তারিখে পোস্ট করা ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

ভিডিওটি শেয়ারকারী সাম্বর রংপি এএফপি'কে জানিয়েছেন, তিনি ডিফু শহরের একজন পুলিশ কনস্টেবল।

গত ৬ নভেম্বর তিনি এএফপিকে বলেন, অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসারদের প্রশিক্ষণকালে কার্বি অ্যাংলং জেলায় ১৪ জুলাই ধারণ করা হয়েছিল।

তার ফেসবুক পেইজে শেয়ার করা অন্য একটি ভিডিওতে তাকে আসাম পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

নিচে ক্লিপটির (বামে) এবং আসাম পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে একজন অফিসারের ছবির (ডানে) মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া ব্যাজ হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

 

২০১৬ সাল হতে আসাম থেকে পোস্ট করা এই ফেসবুক ব্যবহারকারীর আরো কিছু ক্লিপ এখানে এখানে শেয়ার করেছেন, যেখানে একই ধরনের টহল দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

এর আগেও এএফপি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে ছড়ানো অন্যান্য অসত্য দাবি খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছে এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ