ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিকের 'গোপন বৈঠক' বিষয়ে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

বাংলাদেশ যখন কয়েক সপ্তাহ ধরে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখন দেশটির সবচেয়ে বৃহৎ ইসলামপন্থী দলের নেতার সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'গোপন বৈঠকের' একটি বানোয়াট সংবাদ প্রতিবেদন অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে।  অনলাইন পোস্টে ছড়ানো প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান সংকট মোকাবেলায় মোদির কাছে সাহায্য চেয়েছেন। তবে প্রতিবেদনটি ভারতের যে সংবাদপত্রের সংবাদকে এডিট করে ছড়ানো হয়েছে, ওই পত্রিকার রাজনৈতিক সম্পাদক জানিয়েছেন তারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেননি।

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, "ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে জামাতের আমিরের গোপন বৈঠক। কি বুঝলেন।"

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামিকে কট্টর ভারতবিরোধী হিসেবে দেখা হতো। তবে গত আগস্টে মাসে দলটির নেতা শফিকুর রহমান বলেছেন যে, তিনি তাদের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবেশি দেশের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক চান (আর্কাইভ লিংক)।

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দলটির পুনঃআবির্ভাব ঘটে (আর্কাইভ লিংক)।

হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচিত নেতার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আশা করা হচ্ছে তিনি খুব শিগগিরই নির্বাচনের ঘোষণা দিবেন।

১৭,০০০ বেশি অনুসারী সম্পন্ন এমনটি গ্রুপে ছড়ানো ফেসবুক পোস্টে দিল্লিতে মোদির সাথে রহমানের বৈঠকের বিষয়ে ভারতীয় সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন দেখা যায়।

Image
গত ১৬ সেপ্টেম্বর নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

বানোয়াট প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "জাতীয় সংকট উত্তরণে একটি নির্বাচিত সরকারকে দায়িত্ব নেয়া দরকার।"

"জামায়াতে ইসলামির প্রধান ডা. শফিকুর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাহায্যে চান। পবিত্র উমরা সম্পন্ন শেষে তিনি গতরাতে নয়া দিল্লিতে আসেন এবং তার সহকারী সচিবের মাধ্যমে মোদির সাথে সাক্ষাৎ করেন," বলে প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়।"

দুই রাজনীতিকের মধ্যে 'গোপন বৈঠকের' দাবিতে এডিটেড ছবিটি অনুরূপ ফেসবুক পোস্টে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

'বানোয়াট' ছবি

ফেসবুক পোস্টে যে প্রতিবেদন দেখা গেছে, তেমন কোন প্রতিবেদন নিজেদের সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আনন্দবাজার পত্রিকার রাজনৈতিক সম্পাদক।

২৩শে সেপ্টেম্বর সন্দীপন চক্রবর্তী এএফপিকে বলেন, "ছবিটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। ডান পাশের নিউজ আইটেমটি মূল কাগজের উপর বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এবং সংবাদের সাথে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও জাল।"

আনন্দবাজার পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বরের ই-পেপার সংস্করণে ভারতীয় এক ডাক্তারকে নৃশংস ধর্ষণ এবং হত্যার প্রতিবাদের বিষয়ে ভিন্ন একটি প্রধান খবর দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

প্রতিবেনটির কোথাও মোদি কিংবা রহমানের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

নিচে সংবাদপত্রের এডিটেড প্রথম পাতা (বামে) এবং মূল প্রথম পাতার (ডানে) মধ্যে যেসব মিল রয়েছে তা হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
সংবাদপত্রের এডিটেড প্রথম পাতা (বামে) এবং মূল প্রথম পাতার (ডানে) মধ্যে যেসব মিল রয়েছে তা হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট

এডিটেড প্রথম পাতার ছবিতে মোদি এবং রহমানের দুটি আলাদা ছবিকে একসাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা মোদির মূল ছবিতে দেখা যায় যে, তিনি শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন (আর্কাইভ লিংক)।

Image
বানোয়াট সংবাদ প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি (বামে) এবং মোদির ফেসবুক পেজের ছবির (ডানে) মধ্যে তুলনামূলক স্ক্রিনশট

বাংলাদেশী গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, তারা দুজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গত বছর একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন (আর্কাইভ লিংক)।

অন্যদিকে, বানোয়াট প্রতিবেদনে রমানের ছবিটি হচ্ছে তার দলের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া তার মাথার ছবি, যা মোদির অন্য একটি ছবি ওপর বসিয়ে দেয়া হয়েছে (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

Image
বানোয়াট প্রতিবেদনে ব্যবহৃত শফিকুর রহমানের জাল ছবি (বামে) এবং মোদির ছবি এবং রহমানের হেডশটের (ডানে) মধ্যে তুলনামূলক স্ক্রিনশট

এডিটেড ছবির পেছনের ভবনটির অনুসন্ধানে একটি রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে, এটি নয়া দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির অফিসিয়াল বাসভবন তথা রাষ্ট্রপতি ভবন (আর্কইভ লিংক)। 

এএফপি ২রা অক্টোবর পর্যন্ত মোদি ও রহমানের মধ্যে সম্প্রতিক বৈঠকের বিষয়ে অফিসিয়াল কোন খবর পায়নি।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ