ভিডিওটি প্যারিস ক্যাটাকম্বসের, বাংলাদেশের গোপন বন্দীশালার নয়
- প্রকাশিত 4 সেপ্টেম্বর 2024, 10:28
- 3 এক্স মিনিটে পড়ুন
- লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
কপিরাইট © এএফপি ২০১৭-২০২4। এই কন্টেন্টের যেকোন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
গত ৭ আগস্ট ২০২৪ ভিডিওটি শেয়ার করে একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "না-জানি কতো মায়ের সন্তান এখানে শেষ হয়েছে। আয়না ঘরের আন্ডারগ্রাউন্ড।"
এক মিলিয়নের বেশি বার ভিডিও হওয়া ভিডিওটিতে একটি সরু অন্ধকার করিডোরে হাড়ের স্তূপ দেখা যায়।
হাসিনার পতনের পর সাবেক রাজনৈতিক দল জামায়াত-ই-ইসলামীর প্রধানের ছেলে সাবেক সেনকর্মকর্তা আল আজমী, অধিকার কর্মী মাইকেল চাকমা এবং বাংলাদেশি ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাশেমসহ কিছু প্রসিদ্ধ ব্যক্তিকে দেশটির সেনাবাহিনী পরিচালিত গোপন কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার পর অসত্য ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে শুরু করে।
এই কারাগারের একজন বন্দী নিজেকে অন্য কোন বন্দীকে কখনো দেখতে পেত না বলে ওই গোপন অবকাঠামোটি 'আয়নাঘর" হিসেবে পরিচিত ছিল।
বিন কাশেম এএফপিকে জানিয়েছেন যে, তার বিশ্বাস তাকে ওই অবকাঠামোতে বন্দী রাখা হয়েছিলো, কারণ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবার নামে একটি আধাসামরিক দল পরিচালনার অভিযোগ ছিল যারা স্বাধীনতাকামী মানুষকে নির্যাতন করেছে (আর্কাইভ লিংক)।
তিনি বলেন, জানালাহীন নির্জন একটি কারাগারে তাকে দিনের চব্বিশ ঘন্টাই বেধে রাখা হতো।
২০২৩ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে যে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী '৬০০ বেশি গুমের' ঘটনা ঘটিয়েছে।
তবে এই ধরনের কোন অবকাঠামোর অস্থিত্ব ক্রমাগত অস্বীকার করে আসছিল হাসিনার সরকার। কিন্তু একটি ২০২২ সালে একজন হুইসেলব্লোয়ারের জবানবন্দিতে ওই বন্দীশালায় ভয়াবহ নির্যাতনের বিশদ বিবরণ বেরিয়ে আসে (আর্কাইভ লিংক)।
অসত্য পোস্টটি ইউটিউব এবং টিকটকেও শেয়ার করা হয়েছে।
তবে ভিডিওটি ফ্রান্সের রাজধানীতে ভূগর্ভস্থ মৃতদেহের অস্থি সংরক্ষণাগার প্যারিস ক্যাটাকম্বসের।
প্যারিস ক্যাটাকম্বস
গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে একই ভিডিওটি ২০২৪ সালের ১৭ জুনে একটি এক্স একাউন্টের পোস্টে পাওয়া যায় ( আর্কাইভ লিংক)।
ভিডিওটির ৪ সেকেন্ডে "সামারা অ্যাডভেঞ্চারস" লিখা একটি জলছাপ দেখা যায়। একই নামে নগর পরিব্রাজক হিসেবে বিশেষায়িত একটি ইনস্টাগ্রাম পেইজ পাওয়া যায়, যেখানে একই ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "ক্যাটাকম্বস অ্যাডভেঞ্চারস"। "এটি আমার সবচেয়ে সুন্দর ভিডিও নয়, তবে আপনি সত্যিকার ক্যাটাকম্বসের অনুভূতি অনুভব করতে পারেন"।
নীচে অসত্য ভিডিও (বামে) এবং ইনস্টাগ্রাম ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:
ভিডিওটি একই ব্যবহারকারীর নামে ২৭ এপ্রিল একটি টিকটক একাউন্টে আপলোড করা হয়, যেখানে বলা হয় যে এটি প্যারিস ক্যাটাকম্বসে ধারণ করা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।
টিকটক একাউন্টটিতে আরো কিছু ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যার এখানে ও এখানে প্যারিস ক্যাটাকম্বসকে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে ও এখানে)।
প্যারিস ক্যাটাকম্বস ওই শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণমূলক স্পটগুলোর একটি, যেখানে বছরে ৫০০,০০০ দর্শনার্থী দিয়ে থাকে। যদিও এর কিছু অংশ জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।
ভূগর্ভস্থ সমাধীস্থালে ১৭০০ সালের শেষের দিকে প্যারিসের বিভিন্ন কবরস্থান থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষের হাড় রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ যখন বুঝতে পারে যে শহরের কবরস্থানে মৃতদেহের পচন জনস্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয় তখন ১৮ শতাব্দির শেষের দিকে প্যারিসীয় কবরস্থান থেকে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে মানুষের দেহাবশেষ স্থানান্তর শুরু হয়েছিল।
এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?
আমাদের সাথে যোগাযোগ