বাংলাদেশের সাবেক সরকার দলীয় রাজনীতিকের বাসায় আগুনের ভিডিও, হিন্দু ক্রিকেটারের নয়

একটি বাড়ি পুড়ে যাওয়ার ফুটেজ অসত্য দাবিতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে অনলাইনে কয়েক হাজার বার শেয়ার করার পর বাংলাদেশি হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাস স্পষ্ট করেছেন যে, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের সময় তার বাড়িতে আগুন দেয়া হয়নি। মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতার মধ্যে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যা লঘুদের উপর হামলার পাওয়া গেলেও স্থানীয় পুলিশ এএফপিকে জানিয়েছেন যে ভিডিওতে দৃশ্যমান বাড়িটি সাবেক ক্রিকেটার ও হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ দলের রাজনীতিক মাশরাফি বিন মুর্তজার।

গত ৮ আগস্ট ফেসবুকে শেয়ার করা একটি ভিডিও পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "উনি তো রাজনীতি সাথে জড়িত ছিলেন না তাহলে আগুন কেনো লাগানো হলো এই বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাসের বাড়িতে। এগুলো করতে নি স্বাধীনতা হয়েছে দেশ"।

এর আগে ৭ আগস্ট ২০২৪ সামাজিক মাধ্যম 'এক্স'-এ শেয়ার করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "পুড়ে যাওয়া এই বাড়িটি বাংলাদেশের হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাসের। বাংলাদেশে যদি একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার নিরাপদ না হয়, তাহলে বাংলাদেশের সাধারণ হিন্দুদের কথা ভাবুন'।

Image
অসত্য ফেসবুক পোস্টের একটি স্ক্রিনশট

পোস্টটি প্রতিবেশি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভারতে ছড়ানো হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিভক্ত হওয়ার অনেক আগে থেকেই যে দেশটির সাথে বাংলাদেশের গভীর ইতিহাস জড়িত রয়েছে। 

বাংলা পোস্টটিতে একটি জলন্ত বাড়ি ও বাংলাদেশি হিন্দু ক্রিকেটার দাসের স্ত্রীর সাথে তার একটিসহ চারটি এবং ইংরেজি পোস্টটিতে একটি ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

৬০০ বারের বেশি শেয়ার হওয়া পোস্টটিতে আরো বলা হয়, "বাংলাদেশকে দুই ভাগে ভাগ করে দাও। আর বাংলাদেশি হিন্দুদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র কর। এটাই একমাত্র সমাধান।"

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পলায়নের মাধ্যমে তার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয় এবং বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক সপ্তাহের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ শেষ হয়।

তার আকস্মিক পদত্যাগের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে হিন্দুদের বাসাবাড়ি, মন্দির এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হামলার অসংখ্য খবর পাওয়া গেছে (আর্কাইভ লিংক)।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সবচেয়ে বৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং হিন্দুদেরকে হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের জন্য একটি অবিচল সমর্থক গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

একই ধরনের একটি অসত্য দাবি অন্যত্র এক্স-এ এবং ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে।

তবে পোস্টগুলোতে বাড়ির ভুল মালিককে শনাক্ত করা হয়েছে।

ভিত্তিহীন গুজব

তবে ৯ আগস্ট নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এক বিবৃতিতে দাস বলেন, "সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন মিডিয়াতে একটি খবর প্রচার হয়েছে আমাদের বাড়িতে হামলার ঘটনা নিয়ে, যার কোন সত্যতা নেই। কেউ এইসব গুজবে কান দিবেন না। আমি এবং আমার পরিবার এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপদে রয়েছি" (আর্কাইভ লিংক)।

সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "এই দেশে আমরা সকল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যেন একসাথে সামনে এগিয়ে যেতে পারি সেটাই এখন আমাদের একমাত্র মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।"

অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটির কীফ্রেম নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ইউটিউব একাউন্টে ৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি দীর্ঘ ভিডিওতে হুবহুব একই ধরনের একটি বাড়ি দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "নড়াইলে মাশরাফির বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর"।

নিচে অসত্য দাবিতে শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং প্রথম আলো প্রকাশিত ফুটেজের (ডানে) মধ্যে অনুরূপ বস্তুগুলো হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য দাবিতে শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং প্রথম আলো প্রকাশিত ফুটেজের (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট

২০২১ সালের ২৪ জুন স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজ ২৪-র একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত একটি ছবিতে একই বাড়িটি দেখা যায়। প্রতিবেদনে মাশরাফিকে ওই বাড়ির মালিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে অসত্য পোস্টে দৃশ্যমান জলন্ত বাড়ির (বামে) এবং জাগো নিউজ২৪ -এর ছবির (ডানে) মধ্যে সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

ভিডিওতে দৃশ্যমান বাড়িটির মালিক মাশরাফি বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন নড়াইল জেলার পুলিশ প্রধান মেহেদি হাসান।  

তিনি বলেন, "৫ আগস্ট বাড়িটিতে হামলা ও আগুন দেয়া হয়েছে, কিন্তু এ ঘটনায় ১৪ আগস্ট পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি"।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ