বিক্ষোভকারীদের ছবিটি শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্টের ভবনে ধারণ করা, বাংলাদেশের নয়

২০২২ সালে দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বিছনায় বিক্ষোভকারীদের শুয়ে থাকার ছবিকে পুনরায় সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে সেটিকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা তার প্রাসাদে বিশ্রাম নিচ্ছেন বলে অসত্যভাবে প্রচার করা হয়েছে। তবে ভিন্ন একটি ছবিতে দেখা গেছে, ৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালের সমাপ্তির দিনে তার বাসভবনের বিছানায় একজন বাংলাদেশী বিক্ষোভকারীকে বসে আছেন।

গত ৫ আগস্ট ২০২৪ ফেসবুকে প্রকাশিত একটি পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "গণভবনের বিছানায় শুয়ে টিকটক দেখছে"। পোস্টটি ৮৪ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে এবং ৯৮৭ এর বেশি লাইক হয়েছে।

Image
১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট 

গত ৫ আগস্ট ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে হামলা করলে অতীতে সামরিক শাসন থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধারে সহায়তাকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনের তাৎক্ষণিক সমাপ্তি ঘটে।

এএফপির একটি ফুটেজে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের একটি বিছানায় একজন বিক্ষোভকারীকে বসা অবস্থায় দেখা যায়। তবে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে শেয়ার করা ছবিটি ওই ঘটনার নয়।

একই ধরনের অসত্য পোস্ট পাকিস্তনে সামাজিক মাধ্যম এক্স- এ এখানে এবং ইনস্টাগ্রামে এখানে শেয়ার করা হয়। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে ফেসবুকে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসন আমলকে অর্থনীতির পুর্নজন্ম হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে এই শাসনামলকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গণগ্রেফতার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে তার নিরাপত্তা বাহিনীকে নিষেধাজ্ঞার কাল হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জুলাই মাসে বাংলাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়।  পরবর্তীতে এই আন্দোলন ভয়ঙ্কর অস্থিরতায় পরিণত হয় এবং বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে।

শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভ

গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে "প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে রান্না, সাতার ও ঘুমালো শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা" এই শিরোনামে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যেখানে ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, "জুলাই ১০,২০২২ বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকার পর কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বিছানায় ঘুমাচ্ছেন। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ থেকে পালিয়েছেন, কলম্বো, শ্রীলঙ্কা।"

দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে মাসের পর মাস ধরে বেড়ে চলা ভঙ্গুর অর্থনৈতিক সঙ্কটে জনগণের অসন্তোষের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ২০২২ সালের ৯ জুলাই শত শত লোক কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ঘিরে ফেলে।

তবে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রাসাদে ঢুকার কিছুক্ষণ আগেই সৈন্যদের সহায়তায় সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে পালিয়ে যায়। ওই সময় সৈন্যরা খোলা আকাশের দিকে গুলি করে তার প্রস্থান নিশ্চিত করে।

প্রাসাদে ভিড় করা লোকদের মধ্যে কেউ কেউ পালা করে রাজাপাকসের কিং-সাইজ বিছানায় এবং আরামদায়ক সোফায় বসেছিল।

নীচে অসত্য পোস্টের ছবি (বামে) এবং রয়টার্সের ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টের ছবি (বামে) এবং রয়টার্সের ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভ নিয়ে ভারতের ইংরেজি গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদনেও ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ