২০১৮ সালে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিল ঘোষণার ভিডিওটি, ২০২৪ সালের নয়  

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দেয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনার ২০১৮ সালের একটি বক্তব্য পুনরায় ফেসবুক ও টিকটকে ছড়িয়ে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে যে, গত জুন মাসে কোটা পুনর্বহাল করার পর ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে সহিংসতার মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর জন্য চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও, ৩১ জুলাই পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি বাতিলের বিষয়ে শেখ হাসিনা কোনো ঘোষণা দেন নি।

গত ১৭ জুলাই পোস্ট করার পর থেকে ১৭,০০০ বারের বেশি শেয়ার হওয়া একটি ফেসবুক ভিডিওর উপর জুড়ে দেয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "এইমাত্র পাওয়া খবর , সব কোটা বাতিল করলেন।" 

ভিডিও ফুটেজটিতে শেখ হাসিনাকে সংসদকে বলতে দেখা যায়: "কোটাই থাকবে না, কোন কোটারই দরকার নাই। কোটা টোটার দরকার নাই। ঠিক আছে বিসিএস যেভাবে পরীক্ষা হবে, মেধার মাধ্যমে সব নিয়োগ হবে।"

Image
অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

বিসিএস তথা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস হচ্ছে সরকারি চাকরিতে প্রার্থিতা মূলায়নের পরীক্ষা।  

সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্থিতিশীলতায় রূপ নিলে ভিডিওটি অনলাইনে ছড়াতে শুরু করে।

২০১৮ সালে বাতিল হওয়া কোটা পদ্ধতি পুর্নবহাল করে গত জুনে দেয়া হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের পর সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ ও হাসপাতালের তথ্যের উপর ভিত্তি করে এএফপির হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সংঘাতে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪৫০ জন নিহত হয়েছেন।

অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট চাকরিতে সংরক্ষিত কোটার সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনে।

একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে এবং টিকটকে শেয়ার করা হয়েছে।

কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারীকে ভিডিওটিকে সম্প্রতিক বলে বিশ্বাস করেছেন বলে তাদের মন্তব্য দেখে প্রতীয়মান হয়েছে।

একজন লিখেছেন, "এটা ভালো হইছে। নারীদের কোটাও বাতিল করুন! মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিন! ধন্যবাদ প্রিয় নেত্রী!"

অন্য একজন লিখেন, "ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।"

প্রকৃতপক্ষে ভিডিও ২০১৮ সালের যখন শেখ হাসিনা কোটা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।

পুরাতন বক্তব্য

রিভার্স ইমেজ সার্চে ভিডিওটির একটি দীর্ঘ ভার্সন খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল স্থানীয় সম্প্রচার গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

অনলাইনে শেয়ার করা অসত্য পোস্টের ভিডিওতে শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, যমুনা টেলিভিশনের আপলোড করা ভিডিও ক্লিপটির ৯ মিনিট ৪ সেকেন্ডে হাসিনাকে অনুরূপ বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

নীচে অসত্য পোস্টে শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং যমুনা টেলিভিশনের ফুটেজের (বামে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্ট শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং যমুনা টিভির প্রচারিত ভিডিও (ডানে) এর তুলনামূলক চিত্র

একই ফুটেজ ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল নিজেদের ইউটিউব একাউন্টে প্রকাশ করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইটিভি (আর্কাইভ লিংক)।

ওই সময় এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয় ১১ এপ্রিল শেখ হাসিনা সংসদে জানিয়েছেন যে, কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে।

কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী মিছিল ও অবস্থান ধর্মঘট করার শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ওই সময় ইন্টারনেটের 'অপব্যবহার' করে গুজব ছড়ানো এবং সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারী শিক্ষর্থীদের সমালোচনাও করেন হাসিনা।

এএফপি এর আগেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে ছড়ানো অসত্য দাবি খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছে এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ