নিজেদের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় দেশের পতাকার দিকে তাকাতে মুখ ঘুরিয়েছে আয়ারল্যান্ড ফুটবল দল

ইসরায়েলের সাথে একটি ম্যাচের আগে আয়ারল্যান্ডের অনুর্ধ-১৭ নারী ফুটবল দলের সদস্যরা নিজেদের দেশের পতাকার মুখোমুখী দাঁড়াতে মুখ ঘুরিয়েছিলো। কিন্তু সংবাদ প্রতিবেদন এবং সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, গাজা যুদ্ধের কারণে তারা ইসরায়েলের জাতীয় সঙ্গীতকে তিরস্কার করতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। খেলার মূল ফুটেজে ইসরায়েলের জাতীয় সঙ্গীত "হাতিকভাহ" চলা কালে উভয় দলকে একই দিকে মুখ করে দাঁড়াতে দেখা যায়। তবে নিজেদের জাতীয় সংগীত শুরু হলে আইরিশ খেলোয়ারদেরকে নিজেদের পতাকার দিকে ঘুরে যেতে দেখা যায়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে এখানে শেয়ার করা একটি পোস্টে বলা হয়: "আইরিশ জাতীয় মহিলা দলের খেলোয়াড়রা ইসরায়েলের জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন মাঠে উল্টো দিক করে দাঁড়িয়ে আছে, যা হিব্রু মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। ব্রাভো আইরিশ প্রমিলা ফুটবল দল।"

Image

ছবিতে খেলোয়াড় এবং রেফারিদেরকে মাঠে সারিবদ্ধভাবে দেখা যাচ্ছে। তবে সবুজ জার্সি পরা আইরিশ দলকে অন্য সবার বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়াতে দেখা যায়।

একই ধরনের পোস্টে ছবিটি ফেসবুকে এবং 'এক্স'-এ শেয়ার করা হয়েছে। ইসরায়েলের ওয়াইনেটনিউজের ওয়েবসাইটও অসত্যভাবে দাবি করে বলেছে যে, ছবিতে "গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতিবাদ" করছে আয়ারল্যান্ড।

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের উত্তাপ ক্রীড়া জগতেও পড়েছে। এতে ইসরায়েলি ক্রীড়াবিদরা বিভিন্ন খেলায় বৈরী সংবর্ধনার মুখোমুখি হচ্ছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে কাতারে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে ইসরায়েলের আনাস্তাসিয়া গোরবেনকো তিরস্কারের শিকার হন। এর আগে লাটভিয়ায় একটি খেলার আগে আয়ারল্যান্ডের মহিলা বাস্কেটবল দল ইসরায়েলি খেলোয়াড়দের সাথে করমর্দন করতে অসম্মতি জানিয়েছিলো।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন আকস্মিক আক্রমণ করলে চলমান যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির হিসেব মতে হামলায় ১,১৬০জন নিহত হয়।

মিলিট্যান্টরা আরো ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে নিয়ে যায়। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০জন এখনো গাজায় বন্দী রয়েছে বলে বিশ্বাস ইসরায়েলের, যাদের মধ্যে ৩৩জনকে মৃত বলে ধরনা করা হচ্ছে।

হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক পাল্টা সামরিক অভিযানে ৩১,৯৮৮ জনের কাছাকাছি লোক নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে দাবি করেছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ছবিটি আইরিশ মহিলা ফুটবল দল কর্তৃক ইসরায়েলের জাতীয় সংঙ্গীত অবজ্ঞা করার নয়।

পতাকার মুখোমুখী

গুগলে কিওয়ার্ড সার্চে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আইরিশ মিরর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (এফএআই)কে উদ্বৃতি দিয়ে তৈরি ওই প্রতিবেদনে আলবেনিয়ার তিরানায় ওই দিনের ম্যাচে ইসরায়েলি জাতীয় সংঙ্গীত চলার সময় আইরিশ দল মুখ ফিরিয়ে নেয়ার অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করা হয়।

এফএআই-র বিবৃতিতে বলা হয়, "আয়ারল্যান্ডের ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন একটি ভুল ব্যাখ্যা সংশোধন করতে চায় যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, আমাদের আয়ারল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৭ নারী দলের তিরানায় ইসরায়েলের সাথে তাদের উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের জাতীয় সংগীত চলাকালীন তাদের মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে।"

"আয়ারল্যান্ড নারী দল তাদের জাতীয় পতাকার দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর আগে ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত চলা কালে উভয় দলকে একই দিকে মুখ করে ছিলেন। জাতীয় সংগীত চলা কালে পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো অনেক আইরিশ দলের কাছে একটি প্রথা হিসেবে প্রচলিত। তবে ম্যাচ পূর্ব প্রোটকলের আগে আইরিশ টিম ফের একই দিকে মুখ ফিরিয়ে আনেন।"

আইরিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং আইরিশ টাইমসও এফএআই-র বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

আলবেনিয়ান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক সম্প্রচার করা ম্যাচটির সম্পূর্ণ ভিডিওতে ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত 'হাতিকবাহ' চলা কালে উভয় দলকে একই দিকে মুখ করে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির ৪ মিনিট ৬ সেকেন্ডে নিজেদের জাতীয় সংগীত শুরুর আগে আইরিস দলকে ঘুরে যেতে দেখা যায়।

নিচে অসত্য দাবির পোস্টের ছবি (বামে) এবং ম্যাচের ভিডিও থেকে একটি ফ্রেমের (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

আয়ারল্যান্ড দল ম্যাচটি ৩-০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।

ইসরায়েল গাজা যুদ্ধ নিয়ে আরো বিভ্রান্তির তথ্য খণ্ডন করে এএফপির করা প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ