ব্রা পরলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার অসত্য দাবি ছড়াচ্ছে অনলাইনে

ব্রা পরলে স্তন ক্যান্সার হয়, কয়েক দশকের এমন ভ্রান্ত ধারণা নতুন করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। তবে দাবিটি অসত্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণায় ব্রা বা বক্ষবন্ধনি পরার সাথে স্তন ক্যান্সারের কোনো কার্যকরি সংযোগ পাওয়া যায়নি, এবং শারিরীকভাবে ক্ষীণকায় নারীদের এই রোগের হার কম- এমন গবেষণা থেকে হয়তো এই ধরণের ভ্রান্ত বিশ্বাস জাগতে পারে।

গত ৩১ আগস্ট ২০২৩, ফেসবুকে এখানে শেয়ার করা এটি পোস্টের ক্যাপশনে লিখা হয়,  "অনেকে বাড়িতে থেকেও নিজেকে ব্রা থেকে আলাদা করতে পারেন না। কষ্ট হলেও সৌন্দর্যের কথা মাথায় রেখে, সেই কষ্ট সহ্য করেন অনেক মহিলা। তবে আপনাদের জানা উচিৎ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ সময় ব্রা পরে থাকলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ব্রা পরলে সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে।"

পোস্টটির দীর্ঘ ক্যাপশনের একটি অংশে বলা হয়, "এবারে ব্রা না পরার একাধিক উপকারিতা রয়েছে, জানলে অবাক হবেন। অনেক মহিলাদেরই ব্রা সম্পর্কে নানান মিথ্যে প্রচলিত আছে। তারা মনে করেন স্তনের গঠন এবং সৌন্দর্য বজায় রাখতে সব সময় ব্রা পরে থাকা প্রয়োজন। বাস্তবে অধিক সময় ধরে ব্রা পরে থাকলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়।"

ব্রা পরার কারণে ত্বকে চুলকানি ও র্যাসের সমস্যা, স্তনে রক্ত চলাচলে সমস্যাসহ শ্বাসকষ্ট হতে পারে বলে পোস্টটিতে দাবি করা হয়।

Image

একই দাবিতে পোস্টি ফেসবুকে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়।

১৯৯৫ সালে একজন মেডিকেল এনথ্রোপলোজিস্টের লেখা একটি বই এবং ১৯৯১ সালের সালের একটি গবেষণা থেকে এই দাবিটি ছড়াতে শুরু করে যেখানে ব্রা পরেন না এমন প্রি-মেনোপজাল নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার কম দেখা যায় (আর্কাইভ এখানে)।

কিন্তু কোনো গবেষণাতেই ব্রা পরার সাথে স্তন ক্যান্সারের কোনো কার্যকরি সংযোগ পাওয়া যায়নি। বরং অসংখ্য বিশেষজ্ঞ বহু বছর ধরে এই দাবিকে অস্বীকার করে আসছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্রেস্ট ক্যান্সার ফাউন্ডেশন এর ওয়েবসাইটে বলা হয়, "যে ধরনেরই হোক না কেন, ব্রারার কারণে ক্যান্সার হয় না" (আর্কাইভ এখানে)।

"আন্ডারওয়্যার ব্রা বা অন্য কোনো পোশাক পরলে লিম্ফ ফ্লুইড সীমাবদ্ধ থাকে এমন মিথকে সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ নেই। তবে ব্রা পুরোপুরি ফিট না হলে অস্বস্তি এবং কোনো অংশ ফুলে যেতে পারে।"

২০১৪ সালের অন্য একটি গবেষণাতেও ব্রা পরার সাথে ক্যান্সারের কোনো যোগসাজশ খুঁজে পায়নি (আর্কাইভ এখানে)।

গবেষকরা বলেন, "কাপের আকার ব্রা কিংবা আধুনিক ডিজাইনের ব্রা পরিধানের গড় ঘন্টা বা পরিধানের দিন সংখ্যা, এমনকি প্রথম দিন থেকে নিয়মিত ব্রা পরা এগুলোর কোনটিই স্তন ক্যান্সার ঝুঁকির সাথে যুক্ত না।"

১৯৯১ সালের যে গবেষণায় ব্রা না পরা নারীদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রবণতা কম পাওয়া গেছে, তার লেখক বলেন "এটা সম্ভবত তারা পাতলা শরীরের এবং তাদের ছোট স্তনের কারণে হতে পারে।"

ওয়াশিংটন ভিত্তিক দি ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ রিসার্চ তার ওয়েবসাইটে জানান যে, "যদি আন্ডারওয়্যার ব্রা পরিধান করা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে যে বড় স্তনের অনেক নারী ভারী হওয়ার প্রবণতা রয়েছে (আর্কাইভ এখানে)।"

অলাভজনক ওই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে আরো বলা হয়, "অতিরিক্ত ওজন বা শরীরের প্রচুর পরিমাণে চর্বি একজন নারীর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে ফেলে। মূল কথা হচ্ছে: ভালভাবে ডিজাইন করা গবেষণা বিশেষজ্ঞদের সন্তুষ্ট করেত পারেনি যে, ব্রা বা আন্ডারওয়্যার পড়লে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।"

বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচারক ডা. আশরাফুন্নেসা ২৫ মার্চ এএফপিকে বলেন, ব্রা পরার সাথে স্তন ক্যান্সারের সরাসরি কোন যোগসাজশ নেই।

তবে অতিরিক্ত ওজন ও শরীরে চর্বি জমে গেলে এবং শরীর চর্চা না করার ফলে নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় বলে জানান ডা. আশরাফুন্নেসা।

ক্যান্সর নিয়ে অন্য অসত্য এবং বিভ্রান্তিরকর তথ্য খণ্ডন করে এএফপির প্রকাশিত ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ