করলায় ক্যান্সার নিরাময় হওয়ার দাবিকে অসত্য বলছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা

সামাজিক মাধ্যমে করলা ক্যান্সার রোগ দূর করবে এমন একটি অসত্য দাবি ছড়ানোর পর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা রোগীদেরকে ক্যান্সারের প্রতিষেধক হিসেবে এই সবজিটির উপর নির্ভর না করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সবজিটিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী কিছু গুণাগুণ থাকতে পারে। কিন্তু ক্যান্সার ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা এএফপিকে জানিয়েছেন যে, করলা খেলে ক্যান্সার রোগ দূর হবে বা সেরে যাবে এমন দাবির পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই।

২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে এখানে শেয়ার করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়: "তিতা করলা দূর করবে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস! খেতে ভীষণ তিতা কিন্তু গুণে ভরপুর।ইংরেজীতে বিটার মেলন। বাংলা নাম করলা- এমন একটি সবজি যা দূর করতে পারে কান্সার, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। এছাড়াও করলা দূর করে অন্যান্য অনেক মারাত্মক সব শারীরিক সমস্যা।"

পোস্টটির ক্যাপশনে আরো বলা হয়েছে, "দ্য নেভাডা সেন্টার অফ আল্টারনেটিভ অ্যান্ড অ্যান্টি এইজিং মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডঃ ফ্রাংক শ্যালেনবার্গার এম.ডি দেখতে পান এই করলার রয়েছে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধির প্রতিরোধ ক্ষমতা। এবং তিনি তার রোগীদের এই প্রাকৃতিক ক্যান্সার নিরাময়ের সবজিটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধের জন্য। তিনি তার নতুন গবেষণায় দেখতে পান করলার রস পানিতে মাত্র ৫% মিশ্রিত হয় যা প্রমাণ করে এটি অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। করলার প্রায় ৯০%- ৯৮% পর্যন্ত ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসের ক্ষমতা রয়েছে। দ্য ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর একটি গবেষণায় দেখা যায় করলা অগ্ন্যাশয়ের টিউমার প্রায় ৬৪% কমিয়ে আনতে সক্ষম।"

Image

একই ধরনের দাবি ফেসবুকের অন্যত্র এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়।

কিছু গবেষণায় করলায় ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকার বিষয়ে বলা হলেও, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এএফপিকে জানিয়েছেন যে, এই রোগের চিকিৎসায় করলার কার্যকারিতা নিয়ে এখনো বলিষ্ঠ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

'পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. গুলজার হোসেন ২০ মার্চ মুঠোফোনে এএফপিকে বলেন, করলা খেলে ক্যান্সর ভালো হওয়ার যেসব দাবি করা হচ্ছে, এগুলো গুজব ছাড়া আর কিছুই না।

তিনি বলেন, "ক্যান্সার কোন একক রোগ নয় এবং এটার কোন একক সমাধানও নেই। শুধু করলা কেন, এই রোগের একক কোন ঔষুধও নেই, যেটা সেবন করলে এই রোগ ভালো হবে। ফলে করলা খেলে ক্যান্সর ভালো হওয়ার যেসব দাবি করা হচ্ছে, এগুলো গুজব ছাড়া আর কিছুই না।"

"তবে খাবার হিসেবে করলাতে পুষ্টিগুণ আছে। এতে অন্যান্য গুণাগুনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে," বলেন ডা. মো. গুলজার হোসেন।

ঢাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউট্রিশনিস্ট সামিয়া তাসনিম এএফপিকে বলেন, "এটা ঠিক যে, করলাতে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধমূলক উপাদান রয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় যে, কারো শরীরে ক্যান্সারের কোষ তৈরি হওয়ার পর করলা সেবন করলে সেটা সেরে যাবে।"

"তবে করলাসহ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার সব সময় খেলে, শরীরে খারাপ কিছু তৈরি হতে, বিশেষ করে ক্যান্সার কোষকে বৃদ্ধি হতে বাধা দেয়। কিন্তু এটা বলা যাবে না যে, এটা খেলে ক্যান্সার ভালো হয়ে যাবে," জানান তিনি।

করলাতে ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে বলে এখানে এবং এখানে দুটিসহ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে (আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)। তবে ক্যান্সার রোগ নিরাময়ে করলার উপকারিতা এখনো অপ্রমাণিত বলে একমত হয়েছেন ডা. মো. গুলজার এবং সামিয়া তাসনিম।

অধিকতর গবেষণা জরুরি

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত ২০১৭ সালের এক গবেষণার উপসংহারে বলা হয়, করলায় ক্যান্সার রোগীদের জন্য কোন সুবিধা রয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন (আর্কাইভ লিংক)। 

গবেষণাটিতে বলা হয়, "যদিও প্রাণীদের বেশ কয়েকটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে করলা বহুবিধ কার্যকলাপ দেখিয়েছে, তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে করলার ক্যান্সার-বিরোধী প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য আরো পদ্ধতিগত ক্লিনিকাল গবেষণা প্রয়োজন।"

করলা এবং ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে ২০২০ এবং ২০২৩ সালে থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় ছড়ানো একই ধরনের অসত্য দাবি খণ্ডন করে এখানেএখানে প্রতিবদন প্রকাশ করেছে এএফপি।

এর আগে এএফপি খাবারের পর ঠাণ্ডা পানি পান করলে ক্যান্সার হতে পারে এবং সুগার ফ্রি খাবার নিয়মিত খেলে রোগটি দূর হতে পারে বলে অনলাইনে ছড়ানো অসত্য দাবিও খণ্ডন করেছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ