গণহত্যা নিয়ে প্রেসিডেন্ট লুলার মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে "গণহত্যা" হিসেবে অভিহিত করার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কিন্তু দুই দেশ সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো দাবিটি অসত্য। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এএফপিকে জানিয়েছে যে, ব্রাজিল তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করলেও তেল আবিবে দেশটির দূতাবাস খোলা রয়েছে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি 'এক্স' -এ, সাবেক টুইটারে ইসরায়েল ও ব্রাজিলের পতাকা কোলাজ করে আপলোড করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে বল হয়েছে, "ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ব্রাজিল।"

Image

একই দাবি বাংলায় ফেসবুকে এখানে এবং পর্তুগিজ ভাষায় এখানে পোস্ট করা হয়েছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক আক্রমণ করে ফিলিস্তিনের মিলিট্যান্ট গ্রুপ হামাস। ইসরায়েলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির হিসেব মতে হামলায় ১,১৬০জন নিহত হয়।

জবাবে গাজা উপত্যকায় লাগাতার বোমা হামলা এবং স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এতে গাজা ভূখণ্ডের বেশিরভাগ জায়গা বিধ্বস্ত হয়ে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, হামলায় ৩০,০০০ জনের কাছাকাছি লোক নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আফ্রিকান ইউনিয়নের সম্মলনে অংশ নিতে ইথিওপিয়ায় সফরকালে লুলা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে 'গণহত্যা" বলে মন্তব্য করেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, "গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি লোকদের সাথে যা হচ্ছে, এমনটি ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। শুধু একবারই ঘটেছে, যখন হিটলার ইহুদিদের হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।"

প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, লুলা তার মন্তব্যের মাধ্যমে "সীমা অতিক্রম করেছেন"। বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ চিহ্নিত করে ইসরায়েলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল থেকে তার রাষ্ট্রদূত ফ্রেডেরিকো মেয়ারকে প্রত্যাহার করেছে ব্রাজিল। তবে দুই দেশ সব সম্পর্ক ছিন্ন করেনি, যেমনটি অনলাইনে ছড়ানো পোস্টে দাবি করা হয়েছে।

তেল আবিবে নিজেদের দূতাবাস চালু আছে নিশ্চিত করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রেস কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, "আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ইসরায়েল এবং ব্রাজিলের মধ্যে সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান।"

তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইসরায়েলি নেতারা ব্রাজিলে নিযুক্ত নিজেদের রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল জোনশিনেমকে প্রত্যাহার করেনি।

এ বিষয়ে এএফপি সাও পাওলো এবং ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে বেলিজ এবং বলিভিয়া ছাড়া আর কোন দেশ এখনো ইসরায়েলের সাথে সমস্ত সম্পর্ক স্থগিত করেনি।

গাজায় চলমান হামলার মাধ্যমে জেনোসাইড কনভেনশনের লঙ্ঘন হয়েছে, হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে  ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার উত্থাপিত এমন অভিযোগে সমর্থন করেছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া এবং বলিভিয়া।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ সম্পর্কিত অন্যান্য বিভ্রান্তিকর তথ্য খণ্ডন করে এএফপি প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ