বাংলাকে 'মধুরতম ভাষা'র উপাধি সংক্রান্ত বহু বছর পুরনো গুজবকে খণ্ডন করলো ইউনেস্কো

  • প্রকাশিত 27 ফেব্রুয়ারি 2024, 14:03
  • আপডেট করা হয়েছে 7 মার্চ 2024, 07:12
  • 2 এক্স মিনিটে পড়ুন
  • লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলা ভাষাকে 'সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা' ঘোষণা সংক্রান্ত একটি অসত্য দাবি বাংলাদেশের অনলাইনে ছড়ানোর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো জানিয়েছে যে, তারা কখনো 'বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা'র কোন তালিকা প্রকাশ করেনি। গুজবটি অন্তত ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে ছড়িয়েছে, তবে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট এবং এটির সামাজিক মাধ্যম একাউন্টগুলোতে ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ধরনের কোন খবরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার তার ২ লাখের বেশি ফলোয়ারসমৃদ্ধ ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেছেন, "বাঙালীদের অনেকেই বাংলা যে পৃথিবীর মধুরতম ভাষা হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে সেটি নিয়েও সন্দেহ করে। ওরা কি ধরনের বাংলা ভাষাভাষী।"

Image

ওই পোস্টে সময় টিভির একটি সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত ছিল যার শিরোনাম "বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা বাংলা"।

বাংলা ভাষা বাংলাদেশের অফিসিয়াল ভাষা এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলেও এই ভাষায় বহু মানুষ কথা বলেন।

সময় টিভির ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "২০১০ সালে ইউনেস্কোর একদল ভাষাবিজ্ঞানীর দীর্ঘ গবেষণার পর পৃথিবীর সবথেকে শ্রুতিমধুর ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে পায় আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।"

"সেই তালিকায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে স্প্যানিশ এবং ডাচ ভাষা। এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষা ধরে রেখেছে তার পূর্বের অবস্থান।"

২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগে ফেসবুকে একইরকম পোস্ট এখানে এবং এখানে পাওয়া গেছে।

২০২২ সালে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে তখনকার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদকে উদ্ধৃত করে এই অসত্য দাবিটি এখানে পোস্ট করা হয়।

পুরনো গুজব

ইউনেস্কোর একজন মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন যে, সংস্থাটি কখনো বিশ্বের কোন ভাষাকে 'সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা' হিসেবে ঘোষণা করেনি।

"আমাদের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যাচাই করার পর জানাচ্ছি যে, ইউনেস্কো কখনো এই বিষয়ের ওপর কোন জরিপ বা গবেষণা পরিচালনা করেনি", বলেছেন সংস্থার প্রধান তথ্য গণসংযোগ কর্মকর্তা পলিনা হোয়ার্ড।

এএফপি ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ, এক্স হ্যান্ডেল, ইউটিউব চ্যানেল, ইনস্টাগ্রাম এবং লিংকডইন একাউন্ট ঘেঁটে এই সংক্রান্ত কোন তালিকার অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।

এই অসত্য দাবিটি বহু বছর ধরে অনলাইনে ছড়াচ্ছে; এ সংক্রান্ত সবচেয়ে পুরনো যেই পোস্টটি এএফপি খুঁজে পেয়েছে তা ২০১০ সালের এপ্রিল মাসের।

২০১০ এর ১৫ এপ্রিল মাসে এক্স-এ এরকম একটি পোস্টের প্রতিউত্তরে একজন লিখেছেন, "বাংলা ভাষা বিষয়ক সুন্দর তথ্য। আপনি কি আমাকে লিংকটি দিতে পারেন যেখানে ইউনেস্কো বাংলাকে সবচেয়ে মধুর ভাষা বলে অভিহিত করেছে?"

তবে এএফপি ওই এক্স একাউন্টের দাবিটি খুঁজে পায়নি।

এক্স-এ ২১ এপ্রিল ২০১০ এর আরেকটি পোস্টে লেখা হয়েছে, "ইউনেস্কোর গবেষণা আরও জানিয়েছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে শ্রুতিমধুর তিনটি ভাষা হলো বাংলা, স্পেনিশ এবং ডাচ।"

সামাজিক মাধ্যমের এই গুঞ্জন নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া ২০১০ এর ২২ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে সংবাদমাধ্যমটি আলোচ্য দাবির বিষয়ে লিখেছে, "এ বিষয়ে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে নিশ্চিত কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।"

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ