গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের ত্রুটি নিয়ে বিভ্রান্তিকর পোস্ট

গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে ভোটের প্রস্তাব আনা দেশগুলোর তালিকায় ইসরায়েলও ছিল, নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের এমন ত্রুটিপূর্ণ বক্তব্যের ক্লিপকে বিভ্রান্তিকর দাবি সহকারে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। পোস্টগুলোতে অসত্যভাবে দাবি করা হচ্ছে যে, "জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে ভুলবশত ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিলো ইসরায়েল!" তবে পূর্ণাঙ্গ ফুটেজটিতে পরিষদের তখনকার প্রেসিডেন্ট সার্জিও ফ্রাঙ্কা ডেনিসকে সঙ্গে সঙ্গে তার ভুল সংশোধন করতে দেখা যায়। যে ৬০টি দেশ কখনো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরষদের সদস্য নির্বাচিত হয়নি, ইসরায়েল তাদের একটি।

গত ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ফেসবুকে এখানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভিডিও ক্লিপটি পোস্ট করে শিরোনামে বলা হয়, "জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে ভুলবশতঃ ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিলো ইসরাঈল!"

Image

সাত দশমিক ২ মিলিয়নের বেশি ভিউ হওয়া ভিডিওটি ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভার দীর্ঘ ভিডিও থেকে নেয়া হয়। সভায় গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে রাশিয়ার উত্থাপিত প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করা হয় (আর্কাইভ এখানে, এখানে এবং এখানে)।

ভিডিওটিতে নিরাপত্তা পরিষদে তখনকার রোটেটিং প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত সার্জিও ফ্রাঙ্কা ডেনিসকে গাজায় "মানবিক যুদ্ধবিরতির" একটি খসড়া রেজুলেশনে যেসব দেশ সমর্থন দিয়েছিলো, তাদের তালিকা পাঠ করতে গিয়ে ইসরায়েলের নাম উচ্চারণ করার পর বিরতি নিতে দেখা যায়।

বিরতি নেয়া এবং বামে তাকানোর আগে তাঁকে ''বেলারুশ, জিবুতি, মিশর, ইরিত্রিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল" বলতে শুনা যায়। এরপর আবার শুরু করে "জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মালি" নাম পাঠ করেন।

ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এএফপির তৈরি করা তালিকা মতে, ফিলিস্তিনের মিলিট্যান্ট গ্রুপ হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ১,১৬০ ইসরায়েলি নিহত হন। ওই হামলার জবাবে গাজায় ইসরায়েল সামরিক অভিযান শুরু করার পর যুদ্ধ বিরতির খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়।

গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে ওই ভূখণ্ডে অন্তত ২৭,৮৪০ জন নিহত হয়েছেন।

একই দাবিতে ক্লিপটি ফেসবুকে এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ছড়ানোর পর ভিডিও ক্লিপটি একই দাবিতে নাইজেরিয়া, কানাডা, সোমালিয়া এবং ইতালিসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়ানো হয়েছে।

প্রেসিডেন্টের ভুল বক্তব্য

জাতিসংঘের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করা ওই মিটিংয়ের পূর্ণাঙ্গ ভিডিওতে ডেনিসকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব আনা দেশের তালিকায় ইসরায়েল ছিলনা বলে দ্রুতই বিষয়টি স্পষ্ট করতে দেখা যায়।

বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়ানো পোস্টের ভিডিওর সাথে পূর্ণাঙ্গ ভিডিওটির এক মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ফুটেজের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ২ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ফুটেজে ডেনিস বলেন, "আমার বক্তব্য সংশোধন করা উচিৎ। ইসরায়েল এই তালিকাভুক্ত নয় (আর্কাইভ লিংক)।"

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটেও খসড়া প্রস্তাবটি যেসব দেশ এনেছিলো, সেই তালিকায় ইসরায়েলের নাম ছিলনা (আর্কাইভ লিংক)।

তবে জাতিসংঘের অফিসিয়াল তথ্য মতে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়নি (আর্কাইভ লিংক)।

ভোটাধিকার নেই ইসরায়েলের

পনের সদস্য নিয়ে গঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রত্যেক সদস্য দেশের একটি মাত্র ভোটাধিকার রয়েছে (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

এদের মধ্যে মধ্যে চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং তাদের ভোটাধিকার রয়েছে। অস্থায়ী সদস্যরা দুই-বছর মেয়াদ কালের জন্য নির্বাচিত হন।

তবে এখন পর্যন্ত যে ৬০টি দেশ কখনো নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়নি, ইসরায়েল তাদের একটি (আর্কাইভ লিংক)।

অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের জাতীয় নির্বাহী পরিচালক ব্রাইস ওয়েকফিল্ড এএফপিকে জানান, "যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের ভোট দেয়া অসম্ভব, কারণ দেশটি নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী সদস্য নয় (আর্কাইভ লিংক)।"

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ