এটি ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কায় সমুদ্র দুর্ঘটনার ভিডিও, ইয়েমেনে মার্কিন পণ্যবাহী জাহাজে হামলার নয়

  • প্রকাশিত 8 ফেব্রুয়ারি 2024, 13:18
  • আপডেট করা হয়েছে 8 ফেব্রুয়ারি 2024, 13:24
  • 2 এক্স মিনিটে পড়ুন
  • লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন একটি পণ্যবাহী জাহাজে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানোর পর সামাজিক মাধ্যমে জাহাজ থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার একটি নাটকীয় ফুটেজ শেয়ার করে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে যে, ভিডিওটি ক্ষেপনাস্ত্র হামলার কিছুক্ষণ পরে ধারণকৃত। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি ২০২১ সালের একটি সামুদ্রিক দুর্ঘটনার। ওই দুর্ঘটনায় কয়েক টন নাইট্রিক অ্যাসিড বহনকারী সিঙ্গাপুর-নিবন্ধিত একটি জাহাজ আগুনে পুড়ে যায়।

গত ১৬ জানুয়ারি ফেসবুকে এখানে আপলোড করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়: "ইয়েমেন সানা লাল এবং আরব বাহরাইন থেকে ইসরায়েলি জাহাজের সাথে আমেরিকান এবং ব্রিটিশ কার্গো জাহাজের যাত্রা নিষিদ্ধ করার পরেও আমেরিকান এই জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করে ইয়েমেনের হুথি।"

২৬০ বারের বেশি ভিউ হওয়া পোস্টটিতে একটি মালবাহী জাহাজকে আগুনের পুড়ে যাওয়ার আকাশ থেকে নেয়া ফুটেজ দেখা যায়।

Image

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন একটি পণ্যবাহী জাহাজে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য দেয়ার কয়ক ঘন্টা পর থেকে ভিডিও ক্লিপটি ছড়াতে শুরু করে। সমুদ্রগামী জাহাজে বার বার আক্রমণের জবাবে আমেরিকান এবং ব্রিটিশদের বিমান হামলার পদক্ষেপ অস্থিতিশীল অঞ্চলটি ঘিরে আতঙ্ক বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রর সেন্ট্রাল কমান্ড জানায়, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী জিব্রাল্টার ঈগল সমুদ্র যাতায়াতকালে এই ধরনের আক্রমণের শিকার হয়, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং জাহাজটি সমুদ্র চালাচল উপযোগী ছিল।

এদিকে লোহিত সাগরে জাহাজে আক্রমণকে গাজা উপত্যকার প্রতি সংহতির অংশ বলে দাবি করেছেন হুতি বিদ্রােহীরা। গাজা উপত্যকায় ইরান-সমর্থিত হামাস মিলিট্যান্টরা গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধরত রয়েছে।

ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর "প্রতিরোধের কৌশল" হিসেবে হুতিদের এই হামলা এবং তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা জোটের পাল্টা আক্রমণ গাজা যুদ্ধ থেকে ওই অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাধারণত বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ দক্ষিণ-পশ্চিম ইয়েমেন এবং জিবুতির মধ্যে লোহিত সাগরের প্রবেশপথ বাব আল-মান্দেব প্রণালী দিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিদ্রোহী গ্রুপটির হামলার কারণে অনেক জাহাজকে আফ্রিকা হয়ে হাজার হাজার মাইল ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

ভিডিওটি একই দাবিতে ফেসবুকে অন্যত্র এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়।

একই ভিডিও অভিন্ন দাবিতে ইংরেজি, আরবি, স্প্যানিশ, জার্মান এবং উর্দু ভাষায় ছড়ানো হয়।

শ্রীলঙ্কার দুর্ঘটনা

ভিডিওটির কী ফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২১ সালের ২৫মে শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনীর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা এই ক্লিপসহ আরো কিছু ছবির সংকলন খুঁজে পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ইউটিউব ভিডিওর বর্ণনায় বলা হয়, "আগুনে নিমজ্জিত এক্স-প্রেস পার্ল জাহাজের সর্বশেষ ভিডিও ফুটেজ।"

অসত্য দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি শ্রীলঙ্কান বিমান বাহিনীর ইউটিউব পোস্টের ৩৪ সেকেন্ড পরবর্তী ফুটেজের মিরর ভার্সন।

নিচে অসত্যভাবে অনলাইনে শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং ২০২১ সালের ভিডিওর (ডানে) একই বৈশিষ্ট্য হাইলাইট করে তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

ওই দুর্ঘটনা নিয়ে এএফপিও ফুটেজ প্রকাশ করেছিলো।

২০২১ সালের ২০ মে ভারতের গুজরাট থেকে কলম্বো বন্দরে ঢুকার পথে এক্সপ্রেস পার্লে এসিড লিকেজ হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে (আর্কাইভ এখানে)।

সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত জাহাজটিতে ২৮ কন্টেইনার প্ল্যাস্টিকের কাঁচামালসহ ২৫টন নাইট্রিক এসিড ছিলো। যেগুলো বেশিরভাগই সমুদ্রে ভেসে যায়।

লঙ্কান নৌবাহিনী জানিয়েছে, ১৩ দিনের আন্তর্জাতিক অভিযানের পর জাহাজটির আগুন নেভানো হয়।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ