বোমা হামলার পরিবেশে বাবা-মেয়ের মানিয়ে নেয়ার ভিডিওটি সিরিয়ার, ফিলিস্তিনের নয়

গত ৭ অক্টোবর হামাস মিলিট্যান্টদের নজিরবিহীন হামলার জবাবে গাজা উপত্যকায় বিধ্বংসী বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে ফিলিস্তিনের ওই ভূখণ্ডের বড় অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। তবে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়ানো বাবা ও মেয়ের একটি ভিডিওটি-- যেখানে দেখা যাচ্ছে তারা বোমা হামলার শব্দের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন-- ফিলিস্তিনের নয়। প্রকৃতপক্ষে, বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজের প্রতিক্রিয়ায় বাবা কর্তৃক তিন বছর বয়সী মেয়েকে হাসতে শেখানো ভিডিওটি ২০২০ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায় ধারণ করা।

গত ১৮ অক্টোবর ফেসবুকে এখানে আপলোড করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়: "একজন ফিলিস্তিনি বাবা তার মেয়েকে বলছেন যে বিস্ফােরণের শব্দ হচ্ছে খেলনার শব্দ।"

Image

১২ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে একজন মধ্যবয়স্ক লোক একটি বাচ্চা মেয়েকে আরবিতে কিছু বলতে শোনা যায় এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে বিস্ফোরণের শব্দের সঙ্গে অট্টোহাসি দিতে দেখা যায়।

৭ অক্টোবর নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙে হামাস মিলিট্যান্টরা গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে বেসামরিক নাগরিকসহ ১,২০০জন নিহত হন এবং আরো ২৪০ জনকে হামাস বন্দী করে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

হামলার প্রতিশোধ নিতে হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে গাজা উপত্যকাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা এবং কামান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে চলমান যুদ্ধে ১৮,৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি লোক নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।

ভিডিও ক্লিপটি একই দাবিতে ফেসবুকে এখানে এবং টিকটকে এখানে আপলোড করা হয়।

বাংলা ভাষার পাশাপাশি ভিডিও ক্লিপটি উর্দু ভাষায় এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়।

এসব পোস্টের মন্তব্যে এটা প্রতীয়মান হয় যে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে বিশ্বাস করছেন ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ফিলিস্তিনি পরিবার ধারণ করেছে।

একজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন "প্রথমবার একটি বাচ্চাকে হাসতে দেখে আমি কাঁদছি। অন্য একজন লিখেন: "আল্লাহ নিপীড়িত ফিলিস্তিনের সহায় হউক, আমিন।"

কিন্তু ভিডিওটি ২০২০ সালে সিরিয়ার এক বাবা ও তার ছোট্ট মেয়ের।

বিস্ফোরণের বিপরীতে হাসি

ভিডিও থেকে কীফ্রেইম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে করে ২০২০ সালের সংবাদ প্রতিবেদনে ব্যবহৃত একই ভিডিও খুজেঁ পাওয়া যায়।

২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি পোস্ট করা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

একই ভিডিও যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে এখানে প্রকাশিত হয় (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়: "সিরিয়ান ফাদার টিচেস ডটার টু কোঅপ উইথ বোম্বস থ্রু লাফটার।"

নিচে অসত্য দাবিতে ছড়ানো ফেসবুক পোস্টের (বামে) এবং দ্যা গার্ডিয়ানের ভিডিওর (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

দ্যা গার্ডিয়ানের ভিডিওর বর্ণনার একটি অংশে বলা হয়: "সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওটিতে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ এবং তার মেয়ে সালওয়াকে সিরিয়ায় গোলাগুলির শব্দের সময় হাসতে দেখা যাচ্ছে।"

"পরিবার নিয়ে ইদলিব থেকে সরমাদা জেলায় স্থানান্তরিত মোহাম্মদ বোমার আওয়াজকে খেলার একটি অংশ বলে তার মেয়েকে ট্রমা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।"

১২ বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১০ লাখের বেশি মানুষ দেশে ও দেশের বাহিরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এএফপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারটি সারাকেব নামে একটি শহর থেকে পালিয়ে এসেছে। বিমান অভিযানে শহরটির একটি অংশ মাটির সাথে মিশে গিয়েছে।

প্রতিবেদনটির বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলা হয়: "সিরিয়া অন্যান্য এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত কয়েক হাজার বেসামরিক লোকের জন্য ইদলিবের উত্তর একটি শেষ পরণতিতে রূপ নেয়।"

প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, সরকারপন্থী বোমা হামলায় বাড়িঘর থেকে শুরু করে হাসপাতাল কিছুই রেহাই পায়নি। এতে অনেক শিশুসহ শত শত লোক নিহত হয়।

বাবা এবং মেয়ে সম্পর্কে এএফপির একটি ভিডিওর অংশ হিসেবে ক্লিপটি ব্যবহার করা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

২০২০ সালের মার্চের ৪ তারিখের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন জীবনের খোঁজে পরিবারটি সিরিয়া ছেড়ে প্রতিবেশি তুরস্কে চলে যায়।

মোহাম্মদ এএফপিকে বলেছেন তিনি খুশি যে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে তাঁকে আর গেম আবিষ্কার করতে হবে না।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ