গাজায় হামাসের সংসদ ভবন ধ্বংসের অসত্য দাবিতে ভিডিও প্রচার
- প্রকাশিত 26 নভেম্বর 2023, 14:02
- আপডেট করা হয়েছে 26 নভেম্বর 2023, 14:08
- 4 এক্স মিনিটে পড়ুন
- লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
কপিরাইট © এএফপি ২০১৭-২০২4। এই কন্টেন্টের যেকোন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
গত ১৬ নভেম্বর ফেসবুকে এখানে একটি ভিডিও আপলোড করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার সংসদ ভবন উড়িয়ে দিয়েছে - কীভাবে এটিকে ন্যায্যতা দেবে ইসরায়েলের মিত্ররা?"
একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকের এখানে ও এখানে আপলোড করা হয়।
ভিডিওটি প্রথমে ইসরায়েলি মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর ফেসবুকের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকে ফ্রেঞ্চ, রোমানিয়ান, চেক, স্প্যানিশ এবং ইতালিয়ান ভাষায় ছড়ানো হয়।
ইসরায়েলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, হামাস মিলিট্যান্টরা ইসরায়েলের সীমানা অতিক্রম করে আক্রমণ চালিয়ে অধিকাংশ বেসামরিক লোকসহ দেশটির ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর এই পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে আসতে শুরু করে।
হামাসের হামলার পর ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে খাবার, পানি এবং জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে সেখানে আকাশ ও স্থল পথে সামরিক অভিযান চালায়। গত ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ১৪,১০০ জনের বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, ৬,০০০ শিশুসহ মৃতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার পুরো এলাকা তছনছ হয়ে ১৫ লাখেরও বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এতে ওই ভূখন্ডের সংসদ ভবনও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটিতে গাজার সংসদ ভবনের ধ্বংসাবশেষের নয়। বরং অন্য একটি স্থানে বিস্ফোরণের ভিডিও এটি।
গাজার পার্লামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত
গত ১৪ নভেম্বর ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, তারা "হামাসের সংসদ ভবন, সরকারি ভবন, হামাস পুলিশ সদর দপ্তর এবং অস্ত্র তৈরি ও উন্নয়নের জন্য ব্যবহত একটি প্রকৌশল অনুষদ" দখল করেছে।
সংবাদ প্রতিবেদন এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ছবিতে গাজা শহরের ফিলিস্তিনি আইন পরিষদ ভবনে ইসরায়েলি সৈন্যদের দেখা যাচ্ছে (আর্কাইভ লিংক এখানে ও এখানে), যেখানে গাজার ডি ফ্যাক্টো সরকার হিসেবে হামাস অধিবেশন ডাকতো।
দি নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায় যে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর গত ১৪ ও ১৫ নভেম্বরের মধ্যে গাজার সংসদ ভবন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় (আর্কাইভ লিংক)।
সংবাদমাধ্যম সিএনএসও একই ধরনের একটি খবর প্রকাশ করে যেখানে তারা উল্লেখ করে যে, ভবনের ধ্বংসাবশেষের জন্য ইসরায়েলের বাহিনীই দায়ী তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না (আর্কাইভ লিংক)।
ফিলিস্তিনি গ্রামের ছবি
এএফপি নিজস্বভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওর মূল উৎসহ যাচাই করতে না পারলেও ভিডিওটি গাজা শহরে ধারণ করা হয়নি।
ফটক এবং গম্বুজসহ গাজার ফিলিস্তিনি আইন পরিষদ ভবনের স্বতন্ত্র স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার কোনটিই অনলাইন ছড়ানো ফুটেজে দৃশ্যমান নয়। গাজার সংসদ ভবনটি একটি জনবহুল শহুরে পরিবেশে হলেও ভিডিও ক্লিপে দেখানো ভবনটি তুলনামূলক গ্রামীণ এলাকায় বলে মনে হচ্ছে।
কিছু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, ভিডিওটি 'জুহর আদ দিক' গ্রামে তোলা হয়েছে, যা এএফপি জিওলোকেশন টেকনিকস ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।
অনলাইনে শেয়ার করা ভবনের স্যাটেলাইট ছবির বৈশিষ্ট্যের সাথে অসত্য দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর ফুটেজে দৃশ্যমান ছয়টি টাওয়ার এবং গাছের মিল পাওয়া যায়।
'জুহর আদ দিক' গ্রামটি ফিলিস্তিনের আইন সভা ভবন থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
গত ২৮ অক্টোবর নিউইয়র্ক টাইমস ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তোলার আগের দিনের একটি ভিডিও বিশ্লেষণ করেছে যেখানে দেখা যায় যে, তাদের সামরিক ট্যাঙ্ক "জুহর আদ দিক গ্রামের লক্ষ্যে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে (আর্কাইভ লিংক)।"
সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, "জুহর আদ দিক'র প্রায় এক মাইল দীর্ঘ এলাকায় বাড়ি এবং অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে বোমাবর্ষণ করতে দেখা যায়।"
গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা একাধিক মসজিদ, গীর্জা, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স এবং হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করেছে।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ সম্পর্কে ছড়ানো অসত্য তথ্য যাচাই নিয়ে এএফপি-এর আরও প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?
আমাদের সাথে যোগাযোগ