ট্যাঙ্কে মিসাইল আক্রমণের এই ভিডিওটি সিমুলেটেড গেইমের, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের নয়  

গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের উপর হামাসের অস্ত্রধারীদের নজিরবিহীন হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া রক্তাক্ত যুদ্ধে দুই দেশের কয়েক হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ট্যাঙ্কে মিসাইল আক্রমণের একটি ভিডিও ফুটেজের সাথে চলমান সংঘাতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সহিংসতার সাথে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করা কয়েক হাজারবার দেখা ওই ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে 'আরমা ৩' নামের একটি ভিডিও গেইম থেকে নেয়া।

গত ৬ নভেম্বর ফেসবুকে এখানে আপলোড করা একটি ভিডিও পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "ইসরায়েলের ট্যাংক মাটির সাথে মিশিয়ে দিল, ফিলিস্তানের সেনেরা।"

৩৫ হাজারের বেশি ভিউ হওয়া ৫ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করার পরে কয়েকটি ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হতে দেখা যায়।

Image

ভিডিওটি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সাথে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করে একই দাবিতে ফেসবুকের এখানে, এখানে এবং এখানে পোস্ট করা হয়েছে।

৭ অক্টোবর হামাস মিলিট্যান্টরা ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে ভয়ঙ্কর হামলা চালায়। ওই হামলায় শিশুসহ ১,৪০০ জনের বেশি নিহত হয় বলে দাবি ইসরায়েলের। হামাসের আক্রমণের জবাবে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক যুদ্ধাভিযান শুরু করে ইসরায়েল (আর্কাইভ লিংক)।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের বিরতিহীন বোমাবর্ষণে ১২,৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আর্ন্তাজাতিক মানবাধিকার সংগঠন যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানালেও হামাসের কাছে বন্দি ২৪০ জনেরও বেশি জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধে কোনও বিরতি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

তবে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওটি ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত নয়।

যুদ্ধের সিমুলেশন গেইম

বাংলা ভাষার পাশাপাশি ভিডিও ফুটেজটি অন্য ভাষায়ও ফেসবুকে এখানে, এখানে এবং এখানে পোস্ট করা হয়।

সামাজিক মাধ্যমের এসব পোস্টে কিছু ব্যবহারকারী ভিডিওকে অসত্য এবং কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজেরি (সিজিআই) বলে মন্তব্য করেছেন।

এক্স'-এ, পূর্বে যা টুইটার হিসেবে পরিচিত ছিলো, ৪ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ভিউ হওয়া একটি পোস্টে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন যে, এটি আরমা ৩ ভিডিও গেইম থেকে নেয়া হয়েছে।

ফুটেজটি গেইম থেকে নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আরমা ৩ গেইমের নির্মাতা বোহেমিয়া ইন্টারঅ্যাক্টিভ-এর একজন প্রতিনিধি।

কোম্পানির জনসংযোগ ম্যানেজার পাভেল ক্রিজকা এএফপিকে জানান, "ফুটেজটি আরমা ৩ গেইমের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো।"

আরমা ৩ খেলোয়াড়দেরকে বিমান, ট্যাঙ্ক এবং প্রচুর অস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন দৃশ্য তৈরির সুযোগ দেয়।

প্লেয়াররা প্রায়শই ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে কয়েক ঘণ্টার গেমিং ফুটেজ আপলোড করে থাকে। তবে গেইমটির অপব্যবহারের জন্য এর সহজলভ্যতাকে দায়ী করেন গবেষকরা

আরমা ৩ ভিডিওকে ইউক্রেন, আফগানিস্তান, ইরাক এবং মায়ানমারের সংঘাতের বাস্তব ফুটেজ হিসেবে অসত্যদাবিতে এর আগে ছড়ানো বিভিন্ন পোস্টের বহুবার সত্যতা যাচাই করেছে এএফপি।

ক্রিজকা জানান, ভিডিওটি আরমা ৩ গেইমের ভক্তদের দ্বারা পরিবর্তিত রূপ, যা সা'হাত্র নামে পরিচিত।

গেইমিংয়ের আলোচনা ফোরাম স্ট্রিম কমিউনিটির ভাষ্য অনুযায়ী, সা'হাত্র হচ্ছে "বাস্তব বিশ্বের তথ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত আধা-কাল্পনিক ল্যান্ডস্কেপ", যাতে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড এবং স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফুটিয়ে তোলা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

গুগল কীওয়ার্ড সার্চে ফুটেজটির একটি দীর্ঘ ভার্সন পিআরও এলআরআর নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়। এতে বলা হয় যে 'মিলিটারি সিমুলেশন' তৈরির জন্য তারা আরমা ৩ ব্যবহার করে থাকে (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির ডেসক্রিপশনে বলা হয় যে 'এটি ভার্চুয়াল গেইম সিমুলেশন।'

Image

অসত্য দাবিতে ছড়ানো ফুটেজটি পিআরও এলআরআর-এর ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ড থেকে শুরু (আর্কাইভ লিংক)।

ইসরায়েল এবং হামাস যুদ্ধ নিয়ে বহু বিভ্রান্তিকর তথ্য খন্ডন করে এএফপির করা প্রতিবেদন দেখুন এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ