এটি ২০২১ সালে মিশরের মানবিক সাহায্যে নিয়ে গাজামুখী গাড়ি বহরের ভিডিও, ২০২৩ সালের নয়

গত ৭ অক্টোবর হামাসের অস্ত্রোধারীদের নজিরবিহীন আক্রমণের জাবাবে গাজা উপত্যকায় খাবার, পানি এবং জ্বালানি সরবরাহ সীমিত করে লাগাতার বোমা হামলা এবং স্থলপথে অভিযান চালায় ইসরায়েল বাহিনী। এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করে সেটিকে চলতি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মানবিক সাহায্য নিয়ে মিশরের রাফা সীমান্তে অপেক্ষমান গাড়িবহরের বলে দাবি করা হয়েছে। তবে দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটি পুরনো এবং ২০২১ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গত ১৪ অক্টোবর ফেসবুকে এখানে শেয়ার করা পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসীদের জন্য সারা বিশ্ব থেকে আসা সাহায্য নিয়ে মিশরে রাফাহ ক্রসিং এ অপেক্ষা করছে শত শত ট্রাক। মিশর একটি মুসলিম দেশ হওয়ার পরও পার্শ্ববর্তী গাজায় (ফিলিস্তিনে) নির্যাতিত নিপীড়িত মানবেতর জীবন-যাপন করা মুসলিমদের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে আসা সাহায্য প্রবেশে সাময়িক সময়ের জন্যে সীমান্তবর্তী গেইট খুলে দিতে অনেক হিসাব-নিকাশ করছে।"

প্রায় দুই মিনিট দীর্ঘ এরিয়াল ফুটেজের ভিডিওটিতে মরুভূমির মাঝখানে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন মিশরের পতাকা সংবলিত একটি প্রাচীরের সামনে অপেক্ষমান অবস্থায় দেখা যায়।

১,৬০০ বারের বেশি ভিউ হওয়া ভিডিওর ক্যাপশনে আরো বলা হয়, "মিশর সরকারের উচিত ছিল পার্শ্ববর্তী মুসলিম ভাইদের জন্য সবার আগে সাহায্যের হাত বাড়ানো। প্রয়োজনে সেটা সামরিক সহযোগিতা করেও। আজ যদি মিশরে সর্বপ্রথম জনগণের ভোটে নির্বাচিত মোহাম্মদ মুরসির সরকার থাকতো তবে এরকমই সহযোগিতা পেতো ফিলিস্তিনের নির্যাতিতরা।"

Image

একই ভিডিও অভিন্ন দাবিতে ফেসবুকে এখানে এবং এখানে ছড়িয়েছে।

বাংলা ভাষার পাশাপাশি ভিডিওটি পোলিশ, ইংরেজি, ফরাসি এবং স্প্যানিশসহ অন্যান্য ভাষায়ও প্রচারিত হয়েছে।

হামাসের অস্ত্রধারীরা গত ৭ অক্টোবর সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভায়ঙ্কর হামলা চালায়। ইসরায়েল সরকারের মতে হামলায় ১,২০০জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক লোক।

পাল্টা জবাবে, ইসরায়েল গাজায় বড় ধরনের বোমা হামলা এবং স্থল অভিযান চালায়। গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় কয়েক হাজার শিশুসহ ১৪১০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই অঞ্চলের হামাস সরকার।

বিমান হামলায় গাজার বড় একটি অংশ মাটির সাথে মিশে গেছে এবং ন্যূনতম খাবার, পানি এবং জ্বালানির অনুমতি রেখে পুরো এলাকাটিকে অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল।

গাজায় প্রবেশের সব রাস্তা অবরোধ করে রাখার কারণে মিশরীয় দিকে থেকে গাজায় প্রবেশের একমাত্র পথ রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ে ভিড় করে আন্তর্জাতিক সাহায্যবহনকারী যানবাহনের বহর। ঠিক তখনই ভিডিওটি অনলাইনে ছড়াতে থাকে।

গত ১৬ অক্টোবর এএফপির একজন সাংবাদিকের তোলা ছবিতে এখানে এবং এখানে মিশর থেকে গাজার জন্য ত্রাণসামগ্রী বহনকারী ট্রাকের একটি গাড়ির বহরকে ইসমাইলিয়া মরুভূমির প্রধান রাস্তায় অপেক্ষমান দেখা যায়। রাস্তাটি গাজা উপত্যকার সাথে মিশরের সীমান্ত রাফা ক্রাসিং থেকে ৩০০ কিলোমিটার পূর্ব।

তবে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে শেয়ার করা ভিডিওটি ইসরায়েল-হামাসের মধ্যকার চলমান যুদ্ধের আগের।

পুরনো ক্লিপ

গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে মিশর থেকে গাজায় পণ্যসামগ্রী প্রবেশ নিয়ে ২৮ জুলাই ২০২১ সালে ইসরায়েলি গণমাধ্যম এন১২ নিউজ-এ প্রকাশিত একটি ছবি পাওয়া যায়, যেখানে একই দৃশ্য দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ফুটেজে মিশরীয় টেলিভিশন চ্যানেল আল নাহার-এর একটি জলছাপও রয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

কোনো নির্দিষ্ট তারিখের ফেসবুক পোস্ট সার্চ করার টুল "হু পোস্টেড হোয়াট" ব্যবহার করে আরো অনুসন্ধানে ভিডিওর মূল ফুটেজ পাওয়া যায়, যা আল নাহার টিভির ফেসবুক পেইজে ৩১ মে, ২০২১ সালে আপলোড করা হয়েছিলো (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

পোস্টের আরবি ভাষার ক্যাপশনে বলা হয়, "তৃতীয়বারের মতো গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য সহযোগিতা ও সাহায্যের বৃহত্তম বহর পাঠাচ্ছে মিশর।"

নীচে অসত্য দাবিতে ছড়ানো পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং আল নাহার টিভির ভিডিওর (ডানে) একটি তুলনা স্ক্রিনশট দেয়া হলো:

Image

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যেকার যুদ্ধ নিয়ে অসত্য তথ্যের ব্যাপক ছড়াছড়ি হচ্ছে। এসব অসত্য তথ্য যাচাই করে এএফপির প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ