হামাসের তৈরি টিভি সিরিজের ক্লিপকে 'আল-আকসা মসজিদের মুক্তি'র দৃশ্য বলে প্রচার

গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে হামাসের নজিরবিহীন হামলার সূত্র ধরে শুরু হওয়া ইসরায়েল ও হামাসের চলমান যুদ্ধে উভয় পক্ষের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু সংঘাত শুরুর পর ফেসবুকে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে অসত্যভাবে দাবি করা হচ্ছে এটি মিলিট্যান্ট গ্রুপ কর্তৃক জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে আল-আকসা মসজিদ দখলের দৃশ্য। প্রকৃতপক্ষে ক্লিপটি বাস্তব কোন লড়াইয়ের নয়, বরং ফিলিস্তিনের টিভি সিরিজ 'ফিস্ট আব দ্যা ফ্রি"-এর একটি দৃশ্য।

গত ১০ অক্টোবর ফেসবুকে এখানে ছড়ানো একটি ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, "আলহামদুলিল্লাহ। আল আকসা আজ দখল মুক্ত!"

জেরুজালেমের পুরাতন শহরে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান এবং ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ও ধর্মীয় গর্বের প্রতীক।

ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে আরো বলা হয়, "ইসরায়েলের পতাকা ফেলে দিয়ে, সেখানে ফিলিস্তিনের পতাকা লাগি আজান। এর মতো সুন্দর মুহুর্ত আর কিই বা হতে পারে? আল্লাহু আকবর।"

দুই মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিওটি ৩০,০০০ এরও বেশি বার দেখা হয়েছে, যাতে ইউনিফর্ম পরিহিত একদল বন্দুকধারী একটি ভবনের উপর থেকে ইসরায়েলের পতাকা সরিয়ে সেখানে ফিলিস্তিনি পতাকা প্রতিস্থাপন করার দৃশ্য দেখানো হয়েছে।

বন্দুকধারীদের আরবীতে "আল্লাহু আকবর" বলে স্লোগান দিতে শোনা যায়, এর পর আরেকজনকে আযান দিতে দেখা যায়।

Image

এই ধরনের দাবিতে ক্লিপটি ফেসবুকে এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের ইসলামী আন্দোলনকারী সংগঠন হামাসের বন্দুকধারীরা গাজা উপত্যাকা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে 'অপারেশন আল-আকসা ফ্ল্যাড' নামে আকস্মিক আক্রমণ চালানোর পর থেকে পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, ৭৫ বছরেরর ইতিহাসে ভয়ঙ্কর এই হামলায় দেশটির ১,৪০০ বেশি লোক নিহত হয়, যাদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আরো ২৩০ জনকে জিম্মী হিসেবে আটক করে হামাস।

পাল্টা আক্রমণে গত ১৬ বছর ধরে হামাস শাসিত গাজায় ধারাবাহিক বােমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে ৮,৩০০ বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগ বেসামরিক লোক এবং শিশু বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

হামাস দাবি করেছে, গত ৭ অক্টোবর তাদের ১,২০০ "যোদ্ধা" ইসরায়েলের ৫০ টি স্থানে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে তাদের প্রবেশের কোনো প্রমাণ বা রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

ফিলিস্তিনি টিভি সিরিজ

ভিডিওর কী-ফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে, এটি 'ফিস্ট অব দ্যা ফ্রী' নামে ফিলিস্তিনের একটি টিভি সিরিজ থেকে নেয়া হয়েছে।

ইরানপন্থী হিজবুল্লাহ'র টিভি চ্যানেল আল-মানার-এর ওয়েবসাইটে ৩০ পর্বের এই সিরিজটি বিদ্যমান রয়েছে।

বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর দৃশ্যটি সিরিজের শেষ পর্বের ৫৫.০৫ মিনিট পর থেকে নেয়া হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

নীচে অসত্য দাবিতে ছড়ানো পোস্টের ফুটেজ (বামে) এবং আল-মানার চ্যানেলের টিভি সিরিজের (ডানে) দৃশ্যগুলির একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

সিরিজটিতে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল পরিচালিত একটি অভিযানের মঞ্চায়ন করা হয়, যেই অভিযানে সাতজন হামাস যোদ্ধা এবং একজন ইসরায়েলি সৈনিক নিহত হয়।

২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে গোপনে কাজ করার সময় ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনী উন্মোচিত হয়ে যায়, এবং পরবর্তীতে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলগুলির ঘটনা ঘটে যা ২০১৪ সালের যুদ্ধের পর সবচেয়ে মারাত্ম সহিংস পরিস্থিতি বলে মনে করা হয়।

আল-আকসা মসজিদ

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর এএফপির তোলা আল-আকসা মসজিদের ছবিতে মসজিদ কম্পাউন্ডের উপর ফিলিস্তিনি পতাকা উড়তে দেখা যায়নি।

Image

এছাড়া ওই দিন বা পরবর্তীতে মিলিট্যান্টরা মসজিদ কম্পাউন্ডে হামলা করেছে বলেও কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

২০ অক্টোবর এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, হামলার পর থেকে কম্পাউন্ডটি অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে।

১৯৬৭ সালে ছয় দিনব্যাপী যুদ্ধ চলাকালীন ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিজেদের দাবি করে, যেটি কখনোই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর থেকে সেখানে বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত ওল্ড সিটির উন্মুক্ত এলাকায় প্রবেশেচ্ছু লোকদের পরিচয়পত্র চেক করে ৫০ বছরের নিচের ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে দেখা যায়।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শহরের মুসলিম কোয়ার্টারে একজন দোকানদার বলেন, "মনে হচ্ছে এটা কোভিডকালীন সময়, সেখানে এখন কেউ নেই।"

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ