এটি আজারবাইজানে বিচ্ছন্নতাবাদী নেতা গ্রেফতারের ফুটেজ, ইসরায়েলি জানারেলদের আটকের নয়

গত ৭ অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের সুরক্ষিত দক্ষিণ সীমান্ত ভেদ করে আক্রমণ চালিয়ে ১,৪০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা এবং ২০৩ জনকে জিম্মি করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে মিলিট্যান্ট গ্রুপের সদস্যদের হাতে 'ইসরায়েলি জেনারেলদের গ্রেফতার করার' দৃশ্য দেখা যায়নি। চলমান সংঘাতের সঙ্গে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করে কিছু ফেসবুক পোস্টে ফুটেজটি শেয়ার করা হচ্ছে যেখানে প্রকৃতপক্ষে আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা কর্তৃক নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের আটক করতে দেখা যায়৷ ইসারায়েলের কোনে সামরিক জেনারেল গাজায় হামাসের জিম্মায় নেই বলে গত ১৭ অক্টোবর এএফপিকে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গত ৯ অক্টোবর ফেসবুকের এখানে প্রকাশিত এক পোস্টের শিরোনামে বলা হয়, "হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে গাড়ির ভিতর থেকে যাদেরকে নামানো হচ্ছে, তারা কিন্তু সাধারণ লোকদের কেউ না। তারা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার, জেনারেল এবং নানান ডিফেন্স গ্রুপের প্রধান।"

৭,৬০০ বারের বেশি দেখা ভিডিও ফুটেজে "DTX" অক্ষর খোচিত সামরিক ইউনিফর্মে মুখোশধারী কয়েকজন লোক তিন ব্যক্তিকে হাতকড়া পরা অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছেন বলে দেখা যায়।

"পোশাক দেখে কি মনে হয়, তারা যুদ্ধের মাঠে ছিল? উঁহু। এদেরকে তাদের কার্যালয় থেকে ধরে আনা হয়েছে। এবার বুঝুন কোথায় ঢুকেছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী যোদ্ধারা? মরার হিসাব তো অসংখ্য। পদাতিক বাহিনীর প্রধানকেও কিন্তু হত্যা করা হয়েছে। অবস্থা বেগতিক! #আক্বসা_আমাদের," ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে আরো যোগ করা হয়।

Image

গত ৭ অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক হামলায়, যাতে অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক সহ ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। ওই ঘটনার পর গাজায় বিমান ও কামান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।

অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকায় ৩,৭৮৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।

হামলার পর ধরে নেয়া জিম্মিদের "অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির জন্য" হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

একই সঙ্গে অবরোধ ও বোমা হামলায় ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়া গাজায় "মানবিক সাহায্যের অবাধ ও ত্বরিৎ প্রবেশাধিকার" দেয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ইসরায়েল- হামাস সংঘাতের সাথে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করে একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুক পোস্টে বাংলায় এখানে, এখানে বার্মিজ ভাষায় এখানে এবং স্পেনিশ ভাষায় এখানে প্রচার করা হয়েছে।

তবে, ভিডিও ক্লিপটিতে দেখানো ব্যক্তিরা ইসরায়েলি জেনারেল নন, বরং তারা নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা। নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল যেটি গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনে৷

বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা

গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে অসত্য দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর একটি দীর্ঘ সংস্করণ পাওয়া যায়, যা আজারবাইজান স্টেট সিকিউরিটি সার্ভিসের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ অক্টোবর পোস্ট করা হয় (আর্কাইভ লিংক)

আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাটি DTX নামে পরিচিত, যেই অক্ষরগুলো ভিডিও ক্লিপের মুখোশধারী ব্যক্তিদের ইউনিফর্মে দেখা যায়।

অসত্য দাবিতে ছড়ানো পোস্টের ভিডিওর সাথে ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওর ২.২৭ মিনিট থেকে শুরু হওয়া অংশের মিল রয়েছে।

এসব ব্যক্তির আটক নিয়ে একই দিনে আজারবাইজানের রাষ্ট্রী নিরাপত্তা সংস্থার প্রকাশিত বিবৃতিতেও ওই ইউটিউব ভিডিওটি সংযুক্ত করা হয় করা হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

বিবৃতিতে বলা হয়, আকটকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সশস্ত্র গোষ্ঠী সংগঠিত করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে।

আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে আরকাদি আরশাভিরি ঘুকাসিয়ান এবং বাকো সাহাকি সাহাকিয়ান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যারা বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের স্ব-ঘোষিত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন --এই অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী আইনসভার প্রাক্তন স্পিকার ডেভিট রুবেনি ইশখানিয়ান।

গত সেপ্টেম্বরে আজারবাইজান ২৪ ঘন্টার সামরিক অভিযানে নাগর্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর এসব ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়। যে অভিযানের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে উপজাতি আর্মেনিয়ানদের তিন দশকের বিচ্ছিন্নতাবাদী শাসনের অবসান ঘটে (আর্কাইভ লিংক)।

নীচে অসত্য দাবিতে ছড়ানো ফেসবুক পোস্টের ফুটেজ (বামে) এবং আজারবাইজান স্টেট সিকিউরিটি সার্ভিসের (ডানদিকে) ইউটিউব ভিডিওর তিনটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হলো:

Image
Image
Image

তিনজনের মধ্যে দুজনের গ্রেপ্তারের ছবি এএফপি এখানে এবং এখানে প্রকাশ করেছিলো, যাদের একই ধরণের পোশাক পরতে দেখা গেছে।

বিভ্রান্তিকর ভিডিওর ২৫ সেকেন্ডে আজারবাইজানের পতাকাটি একজন DTX অফিসারের ইউনিফর্মে দেখা যায়, যেটি লাল রঙের হাইলাইট করা নীচের স্ক্রিনগ্র্যাবে দেখানো হয়েছে।

Image

গাজায় হামাসের হাতে কোনো ইসরায়েলি জেনারেল জিম্মি নেই বলে গত ১৭ অক্টোবর এএফপিকে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে এএফপি অসংখ্য বিভ্রান্তিকর দাবি খণ্ডন করেছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ